লাগাতার অবস্থানে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা - দৈনিকশিক্ষা

লাগাতার অবস্থানে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন।
 
শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরিকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের এক দফা দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বিটিএ’র চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য দলে দলে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।

তা ছাড়া, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে বছরের পর বছর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকি অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতিসহ প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বারবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
 
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তা ছাড়া, কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো প্রতিকার পাননি। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমকি বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু তনায়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো-আইএলও’র সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন এবং সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ এখন সময়ের দাবি। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদুৎকেন্দ্র ও মাতার বাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বিটিএ’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। 
 
বক্তারা আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের কোনো বিকল্প নেই।
 
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র অনুমোদি ১৪৬টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের নির্দেশনা থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১১.৯২ শতাংশ অথবা জিডিপি’র ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দ কমিয়ে জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সারা জাতি আজ চরমভাবে ক্ষুব্ধ। 
গত ৮ মার্চ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ মার্চ সারা দেশের জেলা সদরে ও কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১৪ মার্চ বেসরকারি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনসহ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সরকারিকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। 
 
গত ২০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান। 
 
গত ১১ জুলাই থেকে ঢাকয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। তাই জাতীয়করণের ঘোষণা না দেয়ায় এবং বাজেটে বিগত অর্থ বছরের চেয়েও কম বরাদ্দ রাখায় ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। তারপরও সরকারের তরফ থেকে কোনো আশ্বাস কিংবা যোগাযোগ না করায় ১৬ জুলাই থেকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলমান লাগাতার অবস্থান র্কসূচিতে সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।

 

 

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032792091369629