শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - দৈনিকশিক্ষা

শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। খুব শীঘ্রই শতভাগ ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পরিষদ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের শিক্ষা বোর্ডে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। 

গত ১২ মে এবারের এসএসসি ও সমমানী পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এতে দেখা গেছে, চারটি শিক্ষা বোর্ডের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তিনটি, রাজশাহী বোর্ডে দুটি, দিনাজপুর বোর্ডে চারটি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদানের অনুমতি বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

তিনি বলেন, ‘এসএসসিতে কেউ পাস না করায় গত বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চারটি প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এবারও যেসব প্রতিষ্ঠান শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোর পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডাকা হবে। তাদের কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হবে। তারা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তাদের প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।’ সব বোর্ডের ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই একই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন।

এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের যে তিনটি বিদ্যালয় থেকে একজনও পাস করতে পারেনি, সেই তিন প্রতিষ্ঠানই মফস্বল এলাকার। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় অবস্থিত সোমজানি উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে।

প্রায় ৩০ বছর আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন না। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিনা বেতনে শিক্ষকরা থাকতে চান না।

শূন্য পাস করা আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বেগম রূপবান উচ্চবিদ্যালয়। এ স্কুল থেকে এবার ১০ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে।

অন্য প্রতিষ্ঠানটি হলো কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরতেরোটেকিয়া মৌজা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এই স্কুল থেকে ৯ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব সুখ্যাতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাঁচ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি। বিদ্যালয়টির নিম্ন মাধ্যমিক স্তর (অষ্টম শ্রেণী) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতে ১১ জন অংশ নিয়ে ৬ জন পাস করেছিল।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌমহনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছয় জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘোগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে দুইজন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।

এছাড়া রাজশাহীর বোর্ডের মোহনপুর ও নওগাঁর আত্রাইয়ে অবস্থিত দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে এবার কেউ পাস করতে পারেনি।

শতভাগ ব্যর্থতায় এগিয়ে মাদরাসা

এবার ৪২টি মাদরাসাথেকে কেউ পাস করতে করেনি। এর সবকটিই ঢাকার বাইরে অবস্থিত। এর মধ্যে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বীরকয়া দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে মাদরাসাটি পাঠদানের অনুমতি পায়। এই মাদরাসা থেকে এবার মাত্র একজন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চারটি মাদরাসা থেকে এবার কেউ দাখিল পরীক্ষায় পাস করেনি। এগুলোর পরীক্ষার্থী ছিল ৮ থেকে ১৮ জনের মধ্যে।

এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেছেন, ‘যেসব মাদরাসা থেকে কেউ পাস করেনি সেগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তদের আমরা ডাকব। তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইব; ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘কাম্য শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরকারি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যাবে না।’

কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে ওইসব প্রতিষ্ঠানে (নিবন্ধিত) শিক্ষার্থী আনতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীর ব্যয় বাড়ার কারণে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে কিনা, সেটিও দেখতে হবে।

‘ইদানীং’ নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অনেক অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে মন্তব্য করে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগী হতে হবে। প্রতিষ্ঠান যদি কাম্য শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারে সেখানে সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা যাবে না। এরইমধ্যে সেটা আমরা বলেছি এবং এ নিয়ে একটা সমীক্ষাও করবো।’

২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ২৯ হাজার ৮৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে দুই হাজার ৯৬৮টি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি।

শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোর্ডের প্রবিধান ও নীতিমালা অনুযায়ী- ১০ জন, ২০ বা ৩০ জন ছাত্রছাত্রী থাকলে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতিই দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও জনপ্রতিনিধিদের তদবিরে পাঠদানের অনুমতি ভাগিয়ে নেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগেও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে পাঠদানের ন্যূনতম পরিবেশ থাকে না এবং সেগুলোতে শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে চায় না বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যে কারণে শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্র থাকা উচিত কিনা, সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

 

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036687850952148