সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ সংবাদ শিরোনাম চোখে পড়ল। ‘চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।’ সংবাদটি ছেপেছে দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা। প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষা আইন অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে যেতে পারেন না। এজন্য মন্ত্রী হিসেবে আমিও যাবো না। পরীক্ষা কক্ষে শুধু পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরাই থাকবেন।
চমৎকার কথা, চমৎকার সিদ্ধান্ত!
মন্ত্রী মহোদয়ের এই সিদ্ধান্ত ও পত্রিকাটির শিরোনামের একটি ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেখতে গত ২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের একাধিক কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। ওই পরিদর্শনের ছবি দ্রুতই সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমে এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ওই ঘটনা নিয়ে ‘সম্পাদকের কাঠগড়া’ কলামে বিশেষ নিবন্ধ লেখেন দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক ও দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। যার শিরোনাম ছিলো ‘পরীক্ষাসন্ত্রস্ত জাতির পরীক্ষার হলে শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর ফটোসেশন’।
সম্পাদকের লেখা প্রকাশের পর শিক্ষা পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের এই মহতী সিদ্ধান্তকে স্যালুট জানাচিছ। যে কোনো ধরনের পরীক্ষাই শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা ও টেনশন নিয়ে আসে। পরীক্ষার হলে গুছিয়ে লিখতে গিয়ে এমনিতেই ওলট-পালট হয়ে যায় জানা বিষয়গুলোও। তার মধ্যে যদি বাড়তি কোনো ঘটনা বা ঝামেলা এসে হাজির হয় তখন মানসিকভাবে অস্থিরতায় থাকা পরীক্ষার্থীরা এক মহা সংকটে পড়ে যান। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে খুব একটা আলোচনা ও হইচই শোনা যায় না, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যেও কোনো ধরনের উচচবাচ্য শোনা যায় না। সবাই হজম করে যান। তবে শিক্ষার সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে সিদ্দিকুর রহমান খান প্রায় দুই যুগ ধরে বিষয়টিতে আলোকপাত করে এসেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন, মন্ত্রী যাওয়া মানে একটি ঝামেলা তৈরি করা। কারণ মন্ত্রী যে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন সেখানে গণমাধ্যমসহ বহু মানুষ যান। পাশাপাশি আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে, যেগুলোর কারণে ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায়। পরীক্ষা শুরুর দিনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আমি অফিস করবো এবং পরীক্ষার খবরাখবর নেবো। মন্ত্রী না গেলে মিডিয়া ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রগুলোর ওপর রিপোর্ট করবে। সেখানে যদি অনিয়মের চিত্র ভেসে আসে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।
নি:সন্দেহে এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন সরকারের সময়ে যেসব বিষয় নিয়ে সম্পাদক সাহেব লেখালেখি, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও সচিত্র প্রতিবেদন করেছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো পাবলিক পরীক্ষার হলে ডজন ডজন ফটো সাংবাদিক ও ক্যমোরপারসন নিয়ে মন্ত্রী-সচিব-ডিজি-চেয়ারম্যান, এমনকি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তারাও ক্লিক ক্লিক শো ডাউন করেন। পরীক্ষাসন্ত্রস্ত জাতি হিসেবে পরিচিত এ দেশটির কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে অতি গুরুত্বপূর্ণ মিনিটগুলোর ক্ষতি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা তিনি বহুবার করেছেন। তিনি এটিও উল্লেখ করেছেন যে, বিএনপি সরকারের আমলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের সময়ে সদলবলে পরীক্ষার হলে ফটোসেশন স্থায়ী রূপ পায়। শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত বুলিয়ে পরীক্ষা কেমন হচেছ তা জানতে চাওয়া হতো। আরও পরে আমরা দেখেছি, শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছেন। কিন্তু তিনি কখনও পরীক্ষার হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা ও গায়ে হাত বোলানোর মতো কাজ করেননি। এটি একটি বড় অনুকরণীয় উদাহরণ।
লেখক : মাছুম বিল্লাহ, ক্যাডেট কলেজের সাবেক অধ্যাপক