শাহ আবদুল করিম (১৯১৬-২০০৯) প্রথিতযশা লোকসংগীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে এই দিনে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধলআশ্রম গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ইব্রাহিম আলী ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, মাতা নাইওরজান বিবি।
শাহ আবদুল করিম বাল্যকালে শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ পাননি। বারো বছর বয়সে তিনি নিজ গ্রামের এক নৈশবিদ্যালয়ে কিছুকাল পড়াশোনা করেন।
সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে নিজের চেষ্টায় তিনি স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। কৈশোরকাল থেকেই গণসঙ্গীতের প্রতি শাহ আবদুল করিমের আকর্ষণ ছিলো।
তাঁর জীবনের প্রথমপর্বে সংগীতের দীক্ষা বাংলা ভাবসাধক ও বাউল পরিমন্ডলে। প্রথম জীবনে তিনি বাউল, ভক্তিমূলক, জারি, সারি, রাধাকৃষ্ণবিষয়ক পালাগান গেয়েছেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তিনি গণসঙ্গীত রচনা ও পরিবেশনে খ্যাতি অর্জন করেন। ছিলেন বাউল সঙ্গীতশিল্পী। এক পর্যায়ে তিনি সাধক দুর্বীণ শাহের সঙ্গে বৃহত্তর সিলেট জেলার বিভিন্ন গ্রামে ‘মালজোড়া গান’ পরিবেশন করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে শাহ আবদুল করিম প্রণীত গণসঙ্গীত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গানের সংকলন হলো, আফতাব সঙ্গীত (১৯৪৮), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ভাটির চিঠি (১৯৯৮), ধলমেলা (১৯৯০), কালনীর কূলে (২০০১)।
তাঁর সমুদয় গ্রন্থেই তত্ত্বগানের পাশাপাশি গণচেতনার গান মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর রচিত তত্ত্বগানের পাশাপাশি গণচেতনার গান এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে, তিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হন। অথচ কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর গণচেতনার মূল পরিচয়কে বাদ দিয়ে তাঁকে ‘বাউলসম্রাট’ নামে অভিহিত করা হয়।
তিনি তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটে তাঁর মৃত্যু হয়।