ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় নামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বা কম্পিউটার বিষয়ের এক সহকারী শিক্ষক বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। কম্পিউটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ক্লাস থেকে।
জানা যায়, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়ায় অবস্থিত হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক শিবানি সরকার (৪০) গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মারাত্মক অসুস্থ।
প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিয়ের আগে শিবানি সরকারের একবার অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা তখন তাকে শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে বিয়ে এবং সন্তান ধারণ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিয়ের পর গর্ভধারণ করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সন্তান প্রসব পর্যন্ত দীর্ঘ ৭-৮ মাস ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। এরপর থেকেই ওই শিক্ষক মারাত্মক অসুস্থ। তিনি ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না।
অভিযোগ আছে, তিনি মাস শেষে একবার বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতা এবং বেতন শিটে স্বাক্ষর করেন। অসুস্থ ওই শিক্ষক এখন তার স্বামীর কর্মস্থল শরিয়তপুর থাকেন। ওই শিক্ষিকার সন্তান বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আগস্ট মাসের শেষ দিকেও তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রথম দিকে মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে গেলেও গত দুই বছরে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে একদিনও ক্লাসে গিয়ে পাঠদান করাতে পারেননি। সাবেক প্রধান শিক্ষকের সময় অসুস্থ শিক্ষক শিবানি সরকার স্কুলে যেতেন কিন্তু ক্লাস নিতেন না। অসুস্থতার কারণে ক্লাস নিতে অক্ষম হওয়ায় একটা পর্যায়ে শিবানি সরকারের পরিবারের পক্ষ থেকে বিধি ভেঙে তার বোনকে দিয়ে ক্লাস নেয়ার সুযোগ চান। কিন্তু বিষয়টি বিধিমোতাবেক না হওয়ায় সভাপতি এবং বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাতে রাজি হননি। অনেকদিন ধরেই শিক্ষক শিবানি সরকারের হাত, পা, মুখ বেঁকে গেছে, স্বাভাবিক কোনো কাজ করতে পারেন না। কম্পিউটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্লাস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা ক্লাস না হওয়ায় ওই বিষয়ে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিবানি ম্যাডাম নামে কাউকে চিনি না। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান এবং বিদ্যালয়টির সভাপতি স্থানীয় বিএনপি নেতা এ কে এম আব্দুস ছাত্তার মোল্যা ওই শিক্ষকের বেতনের টাকার ভাগ নেন বলে অভিযোগ আছে।
শিবানি সরকারের স্বামী স্বপন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তার স্ত্রী শিবানি সরকারি বিধি মোতাবেক ছুটি নেয়। এখন তিন মাসের মেডিক্যাল ছুটিতে আছেন। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষিকা অসুস্থ থাকায় স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। সুস্থ থাকলে নিয়মিত স্কুলে আসেন। বেতন অংশ থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি এ কে এম আব্দুস ছাত্তার মোল্যার মন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমি দুই দিন আগে জানতে পেরেছি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।