রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা কলেজের এক শিক্ষককে তার পা ধরতে বাধ্য করেন। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ তার মেয়ে এবং একই কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবণী রেজার পা ধরতেও বাধ্য করেন ওই শিক্ষককে। আজ শনিবার এসব অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রভাষক মো. আহাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে আহাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের বরখাস্ত করা অধ্যক্ষের নেশা। কারণ, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন তিনি। চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় অধ্যক্ষ তাকে ১৯ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছেন।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সাময়িক বরখাস্ত থাকা কলেজের শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম, শাহিন আক্তার, সাদিকুল ইসলাম ও আবু সালেহ মো. নাজমুস সাদাতও উপস্থিত ছিলেন। সেরাজুল ইসলাম ১১ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত আছেন। অন্য তিনজন সাময়িক বরখাস্ত আছেন ৬ বছর ধরে।
সংবাদ সম্মেলনে আহাদুজ্জামান বলেন, ‘অধ্যক্ষ সেলীম রেজার মেয়ে শ্রাবণী রেজা রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজেই পড়াশোনা করত। গত বছর অধ্যক্ষের মেয়েকে আমি একদিন শ্রেণিকক্ষে এক ছাত্রের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখি। তখন আমি তাকে বকাবকি করি। শ্রাবণী ভাবে, বিষয়টি আমি তার বাবাকে বলে দিলে সমস্যা হবে। এ জন্য সে আমার নামেই উল্টো অভিযোগ করে যে, আমি তাকে শ্লীলতাহানি করেছি। এর প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ আমাকে সবার সামনে প্রকাশ্যে তার এবং মেয়ের পা ধরতে বাধ্য করেন। অধ্যক্ষের কথামতো পা না ধরলে আমার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ উঠবে না ভেবে আমি এতে বাধ্য হই। মামলার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমি শ্লীলতাহানি করিনি। আমাকে যে পা ধরানো হয়েছিল তার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করে রেখেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, নিয়ম না থাকলেও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হক দায়িত্বে আছেন আট বছর ধরে। তিনি অধ্যক্ষের কথা মতোই চলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকেরা অধ্যক্ষ এবং সভাপতিকে অপসারণ এবং তাদের চাকরিতে বহাল করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাজকুমার সরকার, রাজশাহী মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক রনজিৎ সাহা এবং জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মধুও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, বছরের পর বছর শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা অমানবিক। রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সামনে আসছে সেগুলোর যথাযথ তদন্ত প্রয়োজন।
আহাদুজ্জামানের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে অধ্যক্ষ সেলীম রেজা পলাতক আছেন। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ। তাই এসব বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই অভিযোগ প্রসঙ্গে তারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে এই কলেজের অধ্যক্ষ রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এই অধ্যক্ষকে বেধড়ক পিটিয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে সেলীম রেজা দাবি করেছিলেন, তাকে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে উঠে আসে মারধরের ঘটনা সঠিক।
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যে অডিও রেকর্ড শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, সেটি আহাদুজ্জামান ফাঁস করেছেন বলে অধ্যক্ষ মনে করেন। প্রভাষক আহাদুজ্জামান নিজে এলাকায় একটি মামলায় ফেঁসে গেলে অধ্যক্ষ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেলেও অধ্যক্ষ সাময়িক বরখাস্তের ওই আদেশ প্রত্যাহার করেননি।
কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধর এবং তিনটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে আহাদুজ্জামান গত বছরের ৮ নভেম্বর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া অধ্যক্ষ শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ৩ শতাংশ টাকা জোর করে আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত সিআইডির অভিযোগপত্র গ্রহণ করে সম্প্রতি অধ্যক্ষ সেলীম রেজা এবং তার সহযোগী একই কলেজের শিক্ষক ওমর কোরাইশির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।