কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে সোনার আংটি, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৮ জানুয়ারি) চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজীবপুর এই তিন উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে ওই বউভাতে যোগ দেন শিক্ষকেরা। জাকির হোসেন উপজেলা তিনটি নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম–৪ আসনের সংসদ সদস্য।
প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বউভাতের অনুষ্ঠানের জন্য তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গত রোববার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যদিও ছুটির কারণ হিসেবে অতিরিক্ত শীত ও শিশুশিক্ষার্থীদের অসুস্থতার কথা বলা হয়। তবে প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি থেকে এ ছুটি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও বউভাতে যোগ দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, ৩ উপজেলার মোট ১ হাজার ৩০০ শিক্ষক বউভাতে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ জন্য তাঁদের ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম গতকাল সোমবার বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে তাঁর সংসদীয় এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। তবে সব শিক্ষক বউভাতে যোগ দেননি। যেমন রৌমারীর ৬৫০ শিক্ষকের মধ্যে ৩৫০ জনের মতো অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, চাঁদার টাকা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়। অনেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়েও বউভাতে যান।
চিলমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, বউভাতের দাওয়াতে খালি হাতে যাবেন কীভাবে? তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয়। চাঁদার বিষয়ে কাউকে চাপ দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, যাঁরা অনুষ্ঠানে গেছেন, শুধু তাঁরাই চাঁদা দিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এতে ১৫টি গরু ও ৭টি খাসি জবাই করা হয়। এ ছাড়া ছিল মুরগির মাংসের ব্যবস্থা। তবে অনেকে না খেয়ে ফেরত এসেছেন।
চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের একজন শিক্ষক বলেন, অনেকেই দাঁড়িয়ে খাবার খান। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে বাজারে রুটি–কলা খেয়ে ফেরত এসেছেন। একই উপজেলার নয়ার চরের একজন শিক্ষক বলেন, ‘চাঁদা কত দিয়েছি, বলা যাবে না। আয়োজন ব্যাপক ছিল, কিন্তু সিস্টেম ব্রেক হয়েছে, খাওয়াতে পারে নাই। না খেয়েই ফেরত এসেছি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মুঠোফোনে গতকাল একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।