যশোরে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় ‘সেকেন্ড চান্স এডুকেশন’ প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শিক্ষক, তত্ত্বাবধায়কদের (সুপারভাইজার) বেতন পরিশোধ করা হয়নি। ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলের জন্য ভাড়া নেওয়া ঘরের ভাড়া পাননি বাড়িমালিকেরা।
সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা কাগজপত্র জালিয়াতি করে অন্তত দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রকল্পেরই উপজেলা ব্যবস্থাপক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালককে প্রকল্পের কাগজপত্রসহ প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ বলা হয়েছে, ঝরে পড়া শিশুদের জন্য এ প্রকল্পের স্কুলগুলোর বাড়িমালিকেরা ভাড়া পাননি। শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কদের বেতন বকেয়া রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের পোশাক ও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা প্রকল্পের সব বিল-ভাউচার নিজেদের মতো তৈরি করছে। এমনকি প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে; সেটিও নিজেরা তৈরি করেছেন।
জানা গেছে, দেশের ঝরে পড়া শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আওতায় আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি জেলা থেকে একটি লিড এনজিও নির্বাচন করা হয়। যশোরে লিড এনজিও হিসেবে ‘দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ ছয়টি উপজেলা ও যশোর পৌরসভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।
সূত্র জানায়, যশোরের ৬টি উপজেলার প্রায় ৪ স্কুলকেন্দ্রের ১ বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। মাসে দেড় হাজার টাকা হিসেবে এ ৪০০ স্কুলের ১ বছরের ভাড়া দাঁড়ায় ৭২ লাখ টাকা। আর যশোর পৌরসভার ৬০টি কেন্দ্রে আড়াই হাজার টাকা করে দেড় বছরের ভাড়া দেওয়া হয়নি। এই ভাড়ার পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া যশোর পৌরসভার ৬০টি স্কুল কেন্দ্রের ৬০ শিক্ষকের ১০ হাজার টাকা করে ২ মাসের বেতন বাবদ ১২ লাখ টাকা, ৬ উপজেলার ৪০০ জন শিক্ষকের ৫ হাজার টাকা করে ২ মাসের ৪০ লাখ টাকা, উপজেলার ৫০ জন সুপারভাইজারের ১৫ হাজার টাকা করে ২ মাসের বেতন ১৫ লাখ টাকা, পৌরসভার ৬ জন সুপারভাইজার ও উপজেলার আটজন ব্যবস্থাপকের ২০ হাজার টাকা করে ২ মাসের ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা উত্তোলন করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা।’
জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রতিবেদন চাওয়ায় তা পাঠানো হয়েছে।’