গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চিন্ময় বসু নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ এলাকার সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন।
চিন্ময় বসু কোটালীপাড়া উপজেলার ৯৭নং কান্দি বানিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের চন্দ্রকান্ত বসুর ছেলে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, শিক্ষক চিন্ময় বসু প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন ছাত্রীকে কাছে ডেকে নিয়ে তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এসব ঘটনা ভুক্তভোগী ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের জানিয়েছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এ বিষয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার, অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানাকে জানানো হয়েছে। তবে, প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার শিক্ষক চিন্ময় বসুকে রক্ষার জন্য তাড়িঘড়ি করে তাকে তিন দিনের ছুটি দেন।
এ পরিস্থিতিতে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
শিক্ষক চিন্ময় বসু এই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের ক্লাসে পাঠাবেন বলেও মন্তব্য করেছেন কয়েকজন অভিভাবক।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ছুটি শেষে গত রোববার শিক্ষক চিন্ময় বসুর বিদ্যালয়ে যোগদান করার কথা থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি যোগদান করেননি।
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু প্রতিদিন পড়ানোদ সময় আমাদের এক এক জনকে কাছে ডেকে নিয়ে আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এ কারণে আমরা কয়েকজন ছাত্রী পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। স্যার সেখানে গিয়েও আমাদেরকে জড়িয়ে ধরতেন। স্যারের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২-৩ জন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছিলো না। তার কাছে বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে সে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা আমাকে জানায়। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানাই। তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শিক্ষক চিন্ময় বসুকে ছুটি দেন। ওই শিক্ষকে বিদ্যালয় থেকে বদলি না করা পর্যন্ত আমার মেয়েকে ক্লাসে পাঠাবো না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু এখানে যোগদানের পর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের গায়ে কারণে অকারণে হাত দিতেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানাই। কিন্তু তিনি চিন্ময় বসুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ওই স্কুলে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক চিন্ময় বসুকে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন অভিভাবকদের কাছ থেকে জানার পরে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। শিক্ষক চিন্ময় বসু ঘটনাটি মিথ্যা বলে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদেরকে আদর করে পড়া বুঝিয়ে দিতেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। চিন্ময় বসু আমার কাছে ছুটির আবেদন করলে গত ১১ মে থেকে আমি তাকে তিন দিনের ছুটি দিয়েছি।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা পঞ্চম শ্রেণির অনেক ছাত্রীর অভিভাবকই আমাকে জানিয়েছেন। আমরা তার বদলি ও শাস্তির দাবি করছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি বিষয়টি জানার জন্য স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।