শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

অবসরপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সময় প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে তা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা রাখতে বলা হয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলোর প্রধানদের। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা জোগানের ভার শিক্ষার্থীদের কাঁধে দেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায়ের নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। গত ১২ ডিসেম্বর ৫৪০টি সরকারি স্কুলে ভর্তির লটারির ফল প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৯৯ হাজার ২৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর গত ১৩ ডিসেম্বর বেসরকারি ২ হাজার ৮৫২টি স্কুলে ভর্তির লটারির ফল প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৯৭ জন ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডিজিটাল লটারিতে অংশ নিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তির অপেক্ষমান তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন আরও প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি স্কুলগুলোতে আবেদন থাকা সাপেক্ষে ভর্তিচ্ছুরা অপেক্ষমান তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য লটারিতে নির্বাচিতরা সবাই ভর্তি হলেও শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টে জন্য তহবিল উঠবে ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর বেসরকারি ২ হাজার ৮৫২টি স্কুলের ৯ লাখের বেশি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হলে এ খাত থেকে নয় কোটি টাকা পাবে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট। 

গতকাল সোমবার অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক দূর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত আদেশে ভর্তির সময় শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ টাকা করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি স্কুল, স্কুল এন্ড কলেজে (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের তহবিলে বা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখবেন।

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৩১ কোটি টাকা কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ও ৪৬ কোটি টাকা অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য কেটে রাখা হয়। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও থেকে প্রতিমাসে এ দুই খাতের জন্য কেটে রাখা হয় ৩২ কোটি টাকার বেশি। প্রতি মাসে শিক্ষকরা প্রায় ১০৯ কোটি টাকা নিজেদের এমপিও থেকে এ দুই খাতে দেন। বর্তমানে শিক্ষকদের এমপিও থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫-৩০ বছর চাকরি জীবন শেষে শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা’ ও ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’ থেকে বিভিন্ন হারে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এ টাকা পেতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবসর সুবিধার জন্য কোনো কোনো শিক্ষক আবেদন করে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, এ টাকা পেতে তদবির আর ঘুষ দিতে হয়। পরিস্থিতি এমন যে, চেক তৈরি হওয়ার পরও ঘুষ ছাড়া তা ইস্যু করা হয় না। এক্ষেত্রে বিশেষ করে অবসর বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা, পিয়ন, ড্রাইভারের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এছাড়া উভয় বোর্ডের স্থায়ী আমানতের টাকা তফসিলি ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিনিময়েও নানা সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে। এ কারণে স্থায়ী আমানতের টাকা সরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত ত্রিশ হাজার শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিলেন। শিক্ষকদের শুধু অবসর সুবিধার টাকা দিতে প্রতিবছর ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে বলে গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে পাঠানো একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের দাবি পূরণ করা হয় দুটি খাতের আয় থেকে। উভয় সংস্থার স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত আয় ও প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও থেকে কর্তন করা আয়। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা দুই আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। 

জানা গেছে, যথাক্রমে ২০০৪ ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতার টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষকদের আপত্তির মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে এভাবে ফি নেয়ার ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের পর কয়েক মাস এ খাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি নেয়া হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। শিক্ষকদের ভোগান্তি দূর করতে এ ফি আরোপ জরুরি বলে মনে করছেন অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্টরা।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035531520843506