বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩-এর মূল প্রতিপাদ্য শিক্ষার জন্য শিক্ষক ঘাটতি দূর করা প্রয়োজন। বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব অপরিসীম। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষক সংকট শূণ্য সহিষ্ণুতার নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সর্বাঙ্গে মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের শিক্ষক ঘাটতির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো আন্তরিকতার সাথে উপলব্ধি করতে হবে। বাস্তবে দেখা যায় যে, উচ্চস্তরের পদগুলো শূণ্য থাকে না। অথচ শিক্ষকদের পদগুলো দীর্ঘ দুই থেকে তিন বছর থেকে এক যুগ পর্যন্ত খালি থাকে। উক্ত পদের চেয়ারগুলো ধুলোবালিতে বিবর্ণ হয়ে যায়। শিক্ষকের অভাবে মানসম্মত শিক্ষার মান-সম্মান সবই লোপ পায়। শিখন ঘাটতিতে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি টানে। ‘যতো দোষ নন্দ ঘোষ’ প্রবাদের মতো শিক্ষকদের ঘাড়ে তুলে দেয়া হয়।
শিক্ষক ঘাটতির ফলে প্রায়ই শিক্ষার্থীর শ্রেণির কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর ফলে দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে তাদের শিখন ঘাটতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সংশ্লিষ্টদের এ দায় নিয়ে নেই কোনো দৃশ্যমান উপলব্ধিবোধ। এর জন্য তাদের নেই জবাবদিহিতা বরং পদোন্নতিতেও নেই কোনো বাঁধা। সফল কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতির শিখরে যেয়ে অবসরে চলে যায়। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষক ঘাটতি রেখে আগামী প্রজন্মকে পঙ্গু করে দেয়া ঘুষ দুর্নীতির চেয়েও মারাত্মক অপরাধ। জাতিকে এই সংকট থেকে মুক্ত রাখার অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষক সংকট শূণ্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন। গবেষণার নামে প্রাথমিকের শিখন ঘাটতির চিত্র প্রায়ই প্রকাশ পেয়ে থাকে।
শিক্ষক ঘাটতির জন্য দায়ি কর্মকর্তাসহ সবাই যেন একই বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে শিক্ষকদের দোষারোপ করে থাকেন। এ যেন শিক্ষক সমাজের অদৃষ্টের লিখন। এই যন্ত্রণায় শিক্ষক সমাজ জন্ম থেকে জ্বলে আসছে। শিক্ষক সংকটসহ পাঠদান বহির্ভূত কাজের চাপে প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায়ই দৌড়ের ওপর থাকেন। অনেক সময় এক শ্রেণিতে নাম ডেকে, কিছু লেখা দিয়ে, অন্য শ্রেণিতে অনুরূপ কাজ দিয়ে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন। কর্তা ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের চেয়ে অফিসিয়াল তথ্য প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে জবাবদিহিতার আওতায় এনে থাকেন। বহিঃবিশ্বসহ আমাদের দেশে মেধাবী, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল সমাদৃত হয়ে থাকে।
অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকসহ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি। উচ্চশিক্ষিত জনবলের নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে সফল শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তা সক্ষম হতে পারে না। যে পর্যন্ত তার মেধার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা না থাকে। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে রেখে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা হলো, বাবু মাঝি কবিতার সাঁতার না জানা বাবুর মতো, ষোল আনাই মিছে।শিক্ষার ঘাটতি দূর করার জন্য অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তার প্রয়োজন নেই। বরং এরা শিক্ষার ঘাটতি সৃষ্টি করে থাকেন। শিক্ষার ঘাটতি দূর করার প্রয়াসে দক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও মেধাবী সহকারী শিক্ষকদের পদ ধরে শতভাগ পদোন্নতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করে, শিক্ষককে নিয়ে যেতে হবে সর্বোচ্চ শিখরে। প্রাথমিক শিক্ষার নিয়োগবিধি শিশুবান্ধব নয়। এ জন্য অনতিবিলম্বে এ বিধি বাতিল করা প্রয়োজন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষক ঘাটতি শূণ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার হোক। এ প্রত্যাশা হোক সকলের।
জয় বাংলা।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদর ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম