শিক্ষাখাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ চায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাখাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ চায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষাখাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। আদর্শ জাতি গঠন ও চলমান সংকট উত্তরণে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ন্যূনতম ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। একইসঙ্গে সব শিক্ষার্থীর শিক্ষা খবর রাষ্ট্রকে বহন করা, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণ, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দেয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রীদের জন্য আলাদা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রস্তাব করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। 

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিশু কল্যাণ পরিষদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদের সভাপতিত্বে সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন সেক্রেটারি জেনারেল ইউসুফ আহমাদ মানসুর।

বাজেট প্রস্তাবনায় ছয় দফা নীতিগত দাবি ও খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো, সব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করা, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ ব্যবস্থা চালু ও তা সহজলভ্য করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দেয়া এবং ছাত্রীদের অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া। 

খাত ভিত্তিক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বাজেটের ন্যূনতম ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে এবং জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১১ শতাংশ। যা পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রের থেকেই কম। প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে জ্ঞান সূচকে ১৩৮ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২ তম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এত বিশাল অংকের মনোতৃপ্তির বাজেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নের থেকে দেশের উচ্চশিক্ষা খাত ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে, পাশাপাশি মাদরাসাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেট (পরিচালন) বরাদ্দ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৫টি গাইডলাইন ও কৃচ্ছতা সাধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বাড়ানো এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিপূর্বের অভিজ্ঞতা দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মোট বাজেটের ২ শতাংশেরও কম বাজেট দেয়া হচ্ছে গবেষণা খাতে, গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বাজেটের ন্যূনতম ১০শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। এর মধ্যে ৯০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি। সরকারিভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ নজরদারি করতে হবে এবং মেধাবী আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশির ভাগ কলেজে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার মান অসন্তোষজনক আছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় গবেষণাগার, প্রযুক্তি ও কম্পিউটার ল্যাবের অপ্রতুলতা থাকলেও দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি ৮৮০টি কলেজে অনার্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ সরকারি কলেজ কিন্তু বেশিরভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ব্যয় বাজেট থেকে বরাদ্দ দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষা যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা হয়েছিলো তা অর্জন করা যায়নি। শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষ সংকট, যথেষ্ট গবেষণাগার না থাকায় কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার মান বৃদ্ধি ও লক্ষ্য পূরণে বিশেষ বরাদ্দের দাবি করা হয়।

প্রস্তাবনায় ইসলামী ছাত্র ইসলামী ছাত্র আন্দোলন আরো বলছে, সরকারি মাদরাসা মাত্র তিনটি। এর বাইরে উচ্চশিক্ষায় ২১৫টি কামিল, ৭৭টি ফাজিল (অনার্স) এবং এক হাজার ৯৭ টি ফাজিল (পাস) মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসা খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা একেবারে সামান্য ও অপ্রতুল। সুতরাং আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে কওমি মাদরাসা ছিল ১৯ হাজার ১৯৯টি। কওমি মাদরাসায় ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ মেয়েসহ মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ জন। কওমি মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে জাতীয় শিক্ষা ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে করতে আল হায়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া শিক্ষা বোর্ডের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।

প্রস্তাবনা বলা হচ্ছে, ২০ লাখেরও বেশি  জনশক্তি প্রতিবছর শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। যেখানে কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারিখাতে আর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি উৎসে। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা কাজ করে এমন বেকারের হিসেব ধরলে বর্তমান বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্দেশে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করা জরুরি।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033290386199951