সরকারি নিয়ম ও আইন না মেনে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া নাটোরের লালপুরে আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাচীর ঘেঁষে ফসলি জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা।
ফলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এসব ইটভাটার কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ ও উর্বরতা। ফলে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া ইট পোড়ান কাজে বনজ ও ফলজ গাছ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে বিভিন্ন প্রজাতের ফলজ ও বনজ গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। আর কালো ধোঁয়ার কারণে আসন্ন আম ও লিচুর মুকুলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে স্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে জনসাধারণ।
এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থী ও বসবাসকারীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুরুজ্জামান শামীম বলেন, কালো ধোঁয়া ও ছাইসহ দূষিত বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাথাব্যথা, বুক ব্যথা, অ্যাজমা, কাশি, এলার্জি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, এমনকি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার পদ্মা নদীর চর ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা ভবন ও লালপুর সদর, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কাছে সড়কের পাশে এবং লোকালয়ে প্রায় ৩৩টি অবৈধ ইটভাটা আছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে এসব ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ধরনের পদক্ষেপ চোখে পড়েনা বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। এমনকি ইটভাটাগুলোয় তেমন কোনো অভিযান দেখা যায় না। স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছে সচেতন মহল।
লালপুর সদরের কৃষক বাদশা নওশেদ নেওয়াজ লিটন বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে, রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আম ও লিচুর মুকুল নষ্ট হয়ে যায় এবং আমের গুটিগুলোতে কালো দাগ দেখা দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার বলেন, ‘কৃষিজমিতে ভাটা করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এতে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি নিয়ে এসে ইট তৈরি করায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। অন্যদিকে ইটভাটার গরম কালো ধোঁয়াতে ফলবাগানে বিশেষত আমের এ্যানথ্রাকনোজ বা টিম্বার রোগ হয়। সার্বিকভাবে অবৈধ ইটভাটার জন্য কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটার তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। তালিকা হাতে পেলে এসব ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।