বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড যে পর্যন্ত শক্ত না হচ্ছে, সে পর্যন্ত দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই অতি দ্রুত শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
দেশের চাকরিপ্রার্থীরা শিক্ষকতা পেশাকে পছন্দের ক্ষেত্রে সবার নিচের দিকে রাখেন। এর অন্যতম কারণ অন্যান্য পেশায় সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বেশি। যুগ যুগ ধরে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডাররা আন্তক্যাডার বৈষম্যের স্বীকার। সরকারের সব সেক্টরে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ নেই। এ ছাড়া মান-মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা বা আর্থিক সবদিক থেকেই সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের অবস্থান তলানিতে।
মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারের সবচেয়ে অবহেলিত একটা জায়গা। অথচ এই পর্যায় থেকেই মূলত বিবেকবান, কর্মমুখী ও আদর্শ সুনাগরিক তৈরির ভিত তৈরি হয়। মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার বিষয়ে সরকারের সকল মহল অবগত আছে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কারিগরি ও পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের মতো ৯ম গ্রেড (নন-ক্যাডার) দেয়া প্রয়োজন। সময়ের অন্যতম চাহিদা মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা ও ২০১০ এর শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা।
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নিরক্ষরতা হ্রাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অথচ আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে তেমন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। এই দৈন্য থেকে উত্তরণের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেয়া উচিত। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে মেধাবীরা এই পেশায় আকৃষ্ট হবে।
সব পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ বিপিএসসির আদলে বাংলাদেশ শিক্ষক কর্ম কমিশন (বিটিএসসি) গঠন করে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের মতো সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার আলাদা থাকবে। শুধু শিক্ষক হতে যারা আগ্রহী তারাই এখানে আবেদন করবে। মেধাক্রমের ভিত্তিতে ক্যাডার (৯ম গ্রেড), নন-ক্যাডার (৯ম গ্রেড) ও নন-ক্যাডার (১০ম গ্রেড) নিয়োগ প্রদান করা হবে। এতে একই আবেদনে সব পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। এতে শূন্যপদ সমস্যা, আন্তক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতি, পদায়ন ও চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তিসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর অন্যতম লক্ষ্য মানসম্মত শিক্ষা। বিখ্যাত আইরিস লেখক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, ‘Those who can, do; those who can’t, teach.’ অর্থাৎ যারা পারে, তারা করে; যারা পারে না, তারা শিক্ষাদান করে। আমাদের দেশের অবস্থাও ঠিক এমনি। এই অবস্থার পরিবর্তন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লিখিত প্রস্তাবণাগুলো আশু বিবেচ্য বলে মনে করি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)