শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সারা দেশ উত্তাল। ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শোবিজ অঙ্গন থেকে মিডিয়া পাড়ার অনেক তারকা। একে একে নিজেদের মতামত দিয়ে ভরে তুলছেন সামাজিকমাধ্যমের টাইমলাইন। বিষয়টি এখন শুধু দেশেই থেমে নেই, ফেসবুকে কথা বললেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।
স্বস্তিকা মুখার্জি লিখেছেন, ‘প্রায় এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলে না। আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই; তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো।’
বাংলাদেশে আসা নিয়ে তিনি জানালেন, ‘এই তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয় না, মাও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি; কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত।’
ছাত্র বয়স নিয়ে অভিনেত্রীর ভাষায়, ‘ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীরনগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছগুলোও কেমন এক রকম, এক রকম আকাশের মেঘ গুলোও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ।’
স্বস্তিকা মুখার্জি আরও বলেন, ‘এমন এক আপ্যায়নপ্রিয় জাতি দেখিনি; খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না। ওমন সুন্দর করে রাস্তাজুড়ে ভাষার আল্পনা আর কোথায় দেখবো, নয়নজুড়ানো দেয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘আজ অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি -- এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই আমাদের আলো।’
উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ জুলাই) কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নিহত ৬ জনের গায়েবানা জানাজা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। এ সময় কফিন ছুঁয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকাল ১০টার দিকে শনিরআখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা এই মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় টায়ার ও কাঠ জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। পরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন দেয়া হয়।
এছাড়া সংঘর্ষের সময় শর্টগানের গুলিতে শিশুসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন এবং সিয়াম নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহতরা জানান, সন্ধ্যায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় এলোপাতাড়ি গুলিতে তারা আহত হন। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাদের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।