বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাঁচপীর মাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের তার কাছে ইংরেজি বিষয়ের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, স্কুলের বাইরের একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা এবং বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়া ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় চুড়ান্ত আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়ার কাহালু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ উঠেছে, কাহালু উপজেলার পাঁচপীর মাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান আইন লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়ান। ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কিছুদিন আগে থেকেই প্রাইভেট পড়ার কথা বলেন তিনি। কিন্তু তার স্বভাব ও আচরণ সন্তোষজনক না হওয়ায় ওই ছাত্রীসহ কয়েকজন বিদ্যালয়ের বাইরের একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করেন। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান টের পেয়ে গত ২৩ মে সকালে আশালীন কথা বলে ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে অভিযোগ নিয়ে কাহালু থানায় গেলে থানার অফিসার ইনচার্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
ওই ছাত্রী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ইংরেজি বিষয়ে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ান। সে অন্য শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নানা বিষয়ে বিদ্যালয়ে হেয় করে আসছিলেন তাকে। ২৩ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার জন্য বিদ্যালয়ের সামনে বসে ছিলাম। বুঝতে পেরে প্রধান শিক্ষক ডেকে নিয়ে নানারকম অশালীন আচরণ করে বলেন, ‘তোমার মতো ছাত্রী আমার দরকার নেই, বের হয়ে যাও’। পরে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়।
ওই ছাত্রী আরো বলেন, বাধ্য হয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেই। এরপর অচেনা দুই মোটরসাইকেল আরোহী সড়কে আটকিয়ে বাধা দিয়ে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়। ভয়ে আতঙ্কে বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না। প্রধান শিক্ষককে দ্রুত প্রত্যাহার করে বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ওই ছাত্রীর বাবা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা এতো কিছু বুঝি না, মেয়ে যদি কোনো ভুল করে থাকে, তাহলে প্রধান শিক্ষক ডেকে তার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। সেটা না করে আশালীন আচরণ করে মেয়েকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়ে অন্যায় করেছেন।
কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেরিনা আফরোজ এবং কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। তিনি চাইলে সব আইনি সহযোগিতা করা হবে।
কাহালু উপজেলার পাঁচপীর মাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে নেয়া, অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো এবং একাডেমিক স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলে শিক্ষকদের কাছে টাকা দাবিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি কিছু ভুল করেছেন, তবে টাকা নেয়ার কথা সত্য নয়। তাছাড়া প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রীকে বের করে দেয়ার ওই ঘটনা আপোষ মীমাংসা করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, এগুলো নিয়ে এখন আর কথা না বলাই ভালো।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হযরত আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।