শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একদিনের ‘ফ্যাকাল্টি-ইন-হাউস ট্রেনিং’ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজ। ধানমন্ডির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ সেমিনারকক্ষে শনিবার সকাল থেকে দুপুর অবধি এ ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি পাঠদান বোঝা' একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার লক্ষ্য" বিষয়ে একটি সেশন পরিচালনা করেন। এরপর শিক্ষকদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনারারি অধ্যাপক প্রফেসর ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং কলেজ গভর্নিংবডির সম্মানিত বিদ্যোৎসাহী সদস্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন গভর্নিংবডির সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ মেজবাহ-উল- ইসলাম।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ আ ফ ম রেজাউল হাসান, ট্রেনিং প্রোগ্রামের আহ্বায়ক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফসহ অন্যান্যরা।
এ সময় প্রধান অতিথি প্রফেসর এ এস এম আমানউল্লহ বলেন, শিক্ষকদের আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যবহুল হয়ে শিক্ষার্থীদের ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ট্রেনিং এর মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজ একটি সুন্দর ও আদর্শনিষ্ঠ কলেজ। আপনারা যারা আছেন সবাই মিলে আরো সুন্দর করার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ একটি অশুভ ছায়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ৫ আগস্ট শিক্ষাঙ্গনের উপর একটি ধাক্কা লেগেছে একটি স্বাধীন দেশে ৫২ বছর পরে হঠাৎ তিনদিন সরকার নাই, পুলিশ প্রশাসন নাই, এয়ারপোর্ট থেকে দৌড়ে দৌড়ে শত শত লোকজন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বিদেশ চলে যাচ্ছে এটা কি একটি স্বাধীন দেশ? বিপদ এখনো কাটে নাই!
তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষকের আরেক জন শিক্ষকের সঙ্গে কোনভাবেই দ্বন্দ্বে জড়ানো যাবে না। অনেক দেশ আছে যারা আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কম্পিটিশনে পারছে না, গার্মেন্টস খাতে পারছে না, শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পারছে না। তারা চায় আমরা যাতে ডিভাইডেড হয়ে যাই। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হয়ে গেছে দাড়ি-টুপি দেখলেই আমরা তাদেরকে আলাদা করে ফেলি। আমাদের এই ধরনের শিক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা শিক্ষকরা এগিয়ে আসুন। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করুন। কলেজের সার্বিক বিষয়গুলো উন্নত করতে আপনারা কাজ করুন। কোনভাবেই টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রাখবেন না। আমি এমন এমন কলেজ দেখেছি তারা শুধু ইঁদুরের মতো করে ফিক্সড ডিপোজিট করে, আপনারা এটা কইরেন না। আপনারা কাজ করেন। টাকা জমিয়ে লাভ নাই। কারণ আপনি জমিয়ে রেখে যাবেন বিগত দিনের মতো আরেকজন এসে সরকারকে খুশি করার জন্য দিয়ে দিবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে স্ব বিষয়ে সেশন পরিচালনা করে বলেন, আমরা নিজেদের শিক্ষক হিসেবে দাবি করি। এই দাবি করার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত আমরা নিজেরা আসলে কতটা শিখতে পেরেছি, আমরা কতটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছি। আমাদেরকে সৎ হতে হবে কিন্ত আমরা যদি দেখী আমাদের যে শিক্ষা উপকরণ সেটা কোনো এক শিক্ষা কর্মকর্তা মেরে দিল, সেটা দেখার পর আসলে আমাদের আর সৎ থাকতে ইচ্ছা করেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. এ .আই. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ তার স্ব বিষয়ে সেশন পরিচালনার পর বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের মূল যে প্রশ্নটা আমরা কিভাবে পড়াব? শিক্ষাটা আসলে কি? এই প্রশ্ন গুলো আসলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়না। আসলে শিক্ষাটা হলো ডিসিপ্লিন সামাজিক হওয়া অন্যের প্রতি মানবিক হওয়া। এটাই হলো শিক্ষা, এ সকল বিষয়গুলো আমাদের লক্ষ রাখা উচিত। আমাদের দেশে এগুলো আসলে চর্চা করা হয়না। এগুলো আমরা ধার করে পড়াই।