শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর কৌশল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর কৌশল

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

জীবনে চলতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা এবং সাফল্য অর্জনের জন্য যে কাজগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের করতে হয়, তা অনেক সময় চাপের মধ্যে ফেলে। মানসিক চাপ বয়সভেদে ভিন্ন হয়। আবার চাপের কারণগুলো একেক বয়সের মানুষের জন্য একেক রকম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনন্দিন অনেক ছোট ছোট চাপের সম্মুখীন হন। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, আবার সহজে চাপকে মোকাবেলাও করতে পারেন। যখন ব্যক্তি তার চাপ সম্পর্কে অবগত এবং প্রতিনিয়ত চাপকে মোকাবেলা করে, তখন চাপের সঙ্গে তার একটি সম্পর্ক ও সমাযোজন তৈরি হয়। চাপ তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু হঠাৎ করে বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা অপর্যাপ্ততায় কেউ চাপে পড়লে আগে থেকে কৌশল জানা না থাকলে তা মোকাবেলা করা একটু কঠিন হয়।

আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন মানসিক চাপ পরিলক্ষিত হয়। তাদের চাপের ধরন, মাত্রা, কারণ এবং প্রভাব বহু রকম, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একদিকে লেখাপড়ার চাপ, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা। একদিকে পরিবারের প্রত্যাশা এবং পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়, অন্যদিকে এর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া।

অনেকে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজে মেটাতে গিয়ে মানসিক চাপে থাকে। এর সঙ্গে আরো যুক্ত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ও না হওয়া। আবাসিক হলে থাকলে এক ধরনের চাপ আবার বাইরে থাকলে অন্য ধরনের চাপ। শিক্ষক, সহপাঠী এবং সিনিয়র ও জুনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও কম চাপ বহন করতে হয় না। সব শেষে যুক্ত হয় সম্পর্কের টানাপড়েনের চাপ।

কারো সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে, কোনো কারণে সম্পর্কের ছেদ ঘটলে সেই চাপ মোকাবেলা করা তার জন্য কঠিন হয়।

শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক চাপের প্রভাব মৃত্যুর মতো করুণ পরিণতির দিকেও ঠেলে দেয়। আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা আঁচল নামক সংগঠনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, যার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে না পারা। আবার অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক চাপের ফলাফল আত্মহত্যায় না গড়ালেও জীবনের করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। কাউকে কাউকে ডিগ্রি না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ, অত্যন্ত কম গ্রেড নিয়ে বের হওয়া, শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হওয়া আবার চাপ মোকাবেলা করতে না পেরে নেশার জগতে পা বাড়ানো।

নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে নিজেকে যুক্ত করতেও অনেককে দেখা যায়। এমন অনেক পরিণতি মানসিক চাপের কারণে ভোগ করতে হয়। মোটাদাগে এর প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। নিজেকে একজন অপরাধী এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে হয়। কাছের মানুষও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

পরিবারের মেধাবী সন্তানটি যখন ডিগ্রি না নিয়ে বাসায় ফেরে, তখন মা-বাবার কষ্টের সীমা থাকে না। রাষ্ট্রের ক্ষতিও কম নয়। একজন শিক্ষার্থীর জন্য সরকারকে কম টাকা ব্যয় করতে হয় না, কিন্তু সে যখন কোনো কাজে না আসে, তখন সে ক্ষতি তো রাষ্ট্রেরই। তাই মানসিক চাপকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা কমানো এবং মোকাবেলা করা জরুরি।

প্রথমেই আমাদের মানসিক চাপ মোকাবেলা করার কৌশলগুলো জানতে হবে। চাপ সব সময় থাকবে, কিন্তু চাপ মোকাবেলা করার কৌশল জানা থাকলে চাপ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে একাডেমিক জ্ঞান থাকা ও তার প্রয়োগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করানো যেতে পারে। একটি নন-ক্রেডিট কোর্স হিসেবে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া যেতে পারে। নিজস্ব শিক্ষক থাকলে তো ভালো, না থাকলে মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের শিক্ষক এ বিষয়ে পাঠদান করাতে পারেন। যেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ব্যক্তিত্বের বিকাশ, সমাযোজন কৌশল, প্রতিরক্ষা কৌশল, মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গিসংক্রান্ত মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়। যেকোনো বিষয়ে হেরে যাওয়াকে সহজে মেনে নেওয়ার মানসিকতা সবার মধ্যে থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের রোল প্লে করার মাধ্যমে কিভাবে একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়, তা হাতে-কলমে শেখানো যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মৌলিক, সামাজিক ও মানসিক কৌশল ও দক্ষতা আয়ত্ত করা সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বাড়ানো এবং উন্নত করার ওপর জোর দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ প্রদান এবং সব শিক্ষার্থীকে কোনো না কোনো শিক্ষকের অধীনে রেখে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের, কিন্তু বন্ধু নয়। এমন একটি ভৌত অবকাঠামো দরকার হবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের জন্য তাদের যেন কোনো বেগ পেতে না হয়। কাজগুলো বলা যতটা সহজ, করা ততটা কঠিন। কেননা আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ করে বের করে দেওয়ার প্রত্যয়ে। আমরা বেশি জোর দিচ্ছি সেই ধরনের কৌশলগুলোতে, যা কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু আমরা মনে রাখছি না কৌশলগুলো শেখানোর জন্য তার মানসিক চাপ অনুভবের বিষয়টি। চাপে থেকে যদি তার লেখাপড়াই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কৌশলের গুরুত্ব কী!

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং এবং মোটিভেশন সেন্টার থাকা আবশ্যক। নিজে যখন নিজের চাপ মোকাবেলা করতে পারবে না, তখন সেন্টারে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারবে। বিষয়টিকে লক্ষ করে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। সর্বোপরি আমাদের উচিত নিজেদের যত্ন নেওয়া। অন্যে অনেক কিছু বলবে এবং কারো বলাকে ইচ্ছা করলেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। কিন্তু নিজের সঙ্গে নিজে সমাযোজন করতে পারব। পরিবারের চেয়ে বড় বন্ধু আর কিছু হতে পারে না। মানসিক চাপের করুণ পরিণতি থেকে আমরা তখনই বের হতে পারব, যখন নিজের প্রতি যত্নশীল হব, সমাযোজন করতে শিখব, সম্পর্কের ক্ষেত্রে যত্নবান হব এবং প্রয়োজনে অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করব। তখনই আমরা চাপমুক্ত থাকব এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারব।  

 লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

৪৭তম বিসিএসে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন জমা দিতে হবে - dainik shiksha ৪৭তম বিসিএসে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন জমা দিতে হবে মেডিক্যালে ভর্তিতে ‘অটোমেশন’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন - dainik shiksha মেডিক্যালে ভর্তিতে ‘অটোমেশন’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন অস্ত্র মামলায় স্কুলছাত্র কারাগারে - dainik shiksha অস্ত্র মামলায় স্কুলছাত্র কারাগারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসার ৪১ জাল শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha মাদরাসার ৪১ জাল শিক্ষকের এমপিও বাতিল রাবিতে সার্টিফিকেট তুলতে এসে ছাত্রলীগ নেতা আটক - dainik shiksha রাবিতে সার্টিফিকেট তুলতে এসে ছাত্রলীগ নেতা আটক ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033969879150391