শিক্ষার্থীবিহীন স্কুলে নতুন কর্মচারী নিয়োগ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীবিহীন স্কুলে নতুন কর্মচারী নিয়োগ

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী উপজেলার মধ্য চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে মাত্র কয়েকজন। অথচ বেতনভাতা ঠিকই নিচ্ছেন আট শিক্ষক-কর্মচারী। উল্টো নিয়োগ দিয়েছেন নৈশপ্রহরী ও পরিছন্নকর্মীসহ আরও চারজন। শিক্ষার্থী না থাকলে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাভ কি? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর। 

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় মধ্য চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বছরের বেশির ভাগ সময়ই হয় না ক্লাস, নেই সাইনবোর্ডও। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বহু বছর আগেই ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। নামমাত্র চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ১০/১৫ জন। অথচ এ প্রতিষ্ঠানে আটজন শিক্ষক কর্মচারীর পেছনে সরকার প্রতি মাসে খরচ বহন করছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৫০ টাকা।

এ অবস্থায় শিক্ষার্থী শূন্য প্রতিষ্ঠানে গত ৪ নভেম্বর নিয়োগ দেয়া হয়েছে চারজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। শিক্ষার্থীশূন্য প্রতিষ্ঠানে কীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান ও নতুন করে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের।

অভিযোগ উঠেছে, চেক জালিয়াতি মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ ১৮ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় নিয়মিত বেতনভাতা তুলছেন। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক কিংবা কর্মচারী মামলায় কারাভোগ করলে সাময়িক বরখাস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বরখাস্ত করে আবেদন বোর্ডে পাঠাবে; কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে বরখাস্ত না করে নিয়মিত বেতনভাতা দিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংক সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত ৩০ নভেম্বর সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষে চেয়ার-টেবিল থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হাতেগোনা। একজন শিক্ষক তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে চারজন, সপ্তম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই ও অষ্টম শ্রেণিতে তিনজনসহ মোট সাতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান বিশ্বাসের কাছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ভুলবশত আলমারির চাবি বাসায় ফেলে রেখে এসেছি। সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. শামীমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় স্কুলে আসছেন না তিনি। ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্যের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক শিক্ষক মো. শামীমের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খান বলেন, ‘আপনি এর আগেও আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন, নিউজ করেছেন। আজ আবার এ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করছেন। আমি আপনার কোনো কথার উত্তর দেব না।’

পরবর্তীতে তথ্য নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক সুলতান বিশ্বাসের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কত টাকা লাগবে বলেন পাঠাইয়া দিই। নিউজ করার দরকার কি? সভাপতির আদেশ, স্কুলের কোনো তথ্য সাংবাদিককে দেওয়া যাবে না।’

এলাকার বাসিন্দা মো. সোহরাব হোসেন মাস্টার বলেন, ‘আমিও একজন শিক্ষক। আমি যতটুকু জানি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলে শিক্ষকরা কোনোভাবেই সরকারি অংশের বেতনভাতা উত্তোলন করতে পারবেন না; কিন্তু এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও শিক্ষকরা ঠিকই বেতন পাচ্ছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় চলাকালীন ১০-১২ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসে না। সবাই পরীক্ষাও দিচ্ছে না। কারণ এখানে শিক্ষার মান একেবারে ভালো না।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা একাডেমি সুপারভাইজার সেলিম মাহমুদ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার বক্তব্য না নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য নিন। তিনি বর্তমানে উপজেলার দায়িত্বে আছেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার জানামতে ছাত্রসংখ্যা ১০/১৫ জন, এরকম কোনো স্কুল আমতলীতে নেই।’

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বেসরকারি স্কুলের তদারকি করা প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাই স্কুলের এ বেহালদশা। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তিনি বিভাগীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবেন।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032382011413574