রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজটি এক সময় ছিল একটি সাধারণ ক্লিনিক, পরে হয়ে যায় মেডিকেল কলেজ। অভিযোগ রয়েছে, এ কলেজে শিক্ষার্থী আছে, শিক্ষক নেই; হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক ও রোগী নেই। এমনকি অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট) নেই। নামমাত্র বিভাগ থাকলেও কোন বিভাগেরই নেই বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক, সহকারী-সহযোগী অধ্যাপক। এমনকি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পর্যন্ত নেই। তবু চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করছে কলেজটি। পাস করার পরও ইন্টার্নশিপ করতে না পারায় রেজিস্ট্রেশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে মাইগ্রেশনের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনে নেমেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩ মার্চ) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, নর্দান মেডিকেল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রমের নামে যা চলছে সেটা প্রতারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। দুঃখজনক হলো, দেশে এ ধরনের প্রতারণা এটিই প্রথম নয়। অতীতেও দেখা গেছে যে, অনুমোদন ছাড়াই অনেক প্রতিষ্ঠান দিব্যি শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে শিক্ষক নেই, শিক্ষা উপকরণ নেই, অবকাঠামো নেই, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তবু সেটাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এবং তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। প্রশ্ন হলো, একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটে কীভাবে?
এ অনাচার কোনভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না।
মেডিকেল শিক্ষা নিয়ে প্রতারণা আত্মঘাতীমূলক। দেশে অনেক চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে যারা চিকিৎসকের ডিগ্রি পাচ্ছেন, তারা মানসম্পন্ন মেডিকেল শিক্ষা পেয়েই ডিগ্রিটা পাচ্ছেন। কারণ চিকিৎসকের পেশার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। তাই শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে হবে, অন্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে। আমরা চাই, অনুমোদন ছাড়া, শিক্ষা উপকরণ ছাড়া স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়ে যেসব মেডিকেল কলেজ চলছে, সেগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হোক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।
নর্দান মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের দ্রুত মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা নিয়ে জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এসব ক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত। বিদেশ থেকে প্রতি বছরই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসেন। শুধু নর্দান মেডিকেল কলেজেই পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের ৪০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যদি প্রতারণা চলে তবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হবেন না।