শিক্ষায় কর্তৃত্ব চান সবাই - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় কর্তৃত্ব চান সবাই

এনামুল হক প্রিন্স |

শিক্ষা প্রশাসনে কর্তৃত্বে যেতে চান সব পর্যায়ের শিক্ষকরা। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হতে ‘স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন। শুধু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠাই নয়, তারা এ অধিদপ্তরের বড় পদগুলোতে পদায়নের দাবি জানাচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডারের ডিসিরাও মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর করার প্রস্তাব করেছেন।
 
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বড় পদগুলোর দখলে রাখা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডার শিক্ষা কর্তৃত্ব স্থাপন করতে আলাদা অধিদপ্তরে কথা বলছে। তারা অধিদপ্তরের ‘অখণ্ডতা’ রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ব নিয়ে চতুর্মুখী নীরব স্নায়ুযুদ্ধ চলছে শিক্ষা প্রশাসনে। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সরকারি স্কুল শিক্ষক, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, শিক্ষা ক্যাডারের কলেজ শিক্ষক ও প্রশাসন ক্যাডার শিক্ষা প্রশাসনে তাদের কর্তৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব চাচ্ছেন তথা কর্মকর্তা হতে চাচ্ছেন।

দেশের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরে বড় পদগুলোতে থাকেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। তবে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের অভিযোগ, পদায়ন, পদোন্নতি, টাইমস্কেল, বদলিসহ নানা বিষয়ে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডার পরিচয়েরও বিরোধীতা করছেন শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তথা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে চাচ্ছেন না তারা। তাই, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা। শিক্ষানীতি অনুসারে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও।

তারা শিক্ষানীতি অনুসারে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়ে এ দুই অধিদপ্তরের পদে ৩০ শতাংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষককে ডেপুটেশনে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। স্বতন্ত্র অধিদপ্তর গঠন হলে শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষা ক্যাডারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব শেষ হবে বলে শঙ্কা তাদের মনে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও মনে করছেন, অধিদপ্তরের বিভাজন হলে সমন্বয়হীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

প্রশাসন ক্যাডার সদস্য জেলা প্রশাসকরা স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন ডিসি সম্মেলনে। যা নিয়ে মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর ইস্যু শিক্ষা প্রশাসনের ‘হট টপিকে’ পরিণত হয়েছিলো।   

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষকরা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে আলাদা অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অবকাঠামোতেই মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বা মাশি প্রতিষ্ঠা সম্ভব, এর জন্য সরকারের বাড়তি খরচ হবে না। আর আলাদা অধিদপ্তর গঠনের ফলে শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে। প্রায় ২৪ হাজার প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক স্কুল। আর সাড়ে তিন হাজার কলেজ। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। তারা এমপিওর এবং স্কুলের বিষয়াদি সহজে বুঝতেও পারেন না। মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর হলে এবং তার নিয়ন্ত্রণে স্কুলগুলোর শিক্ষকরা থাকলে সমস্যাগুলো দূর হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি মাধ্যমিক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান ও সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির খুলনা অঞ্চল কমিটির সভাপতি মমতাজ খাতুন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের পদসহ পরিদর্শন শাখার অন্যান্য সব পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়নের দাবি জানাচ্ছি। এতে বেসরকারি মাধ্যমিকের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও পদায়ন পেতে পারেন। এতে আমাদের অসুবিধা নেই। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর নামে দুটি আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কথা বলা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দিন দিন মাধ্যমিক শিক্ষা অবহেলিত হচ্ছে। 

এদিকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে অধিদপ্তরের ৩০ শতাংশ পদে তাদের পদায়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাধ্যমিকে আলাদা অধিদপ্তরের দাবি বহু আগের। বেসরকারি শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর করতে মাধ্যমিকে আলাদা অধিদপ্তর হওয়া উচিত। আমরা আলাদা অধিদপ্তর হলে সেখানে ৩০ শতাংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়নের দাবি জানাই। 

তিনি আরও বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর গঠন করা হলে সেখানেও আমরা চাই বেসরকারি স্নাতক কলেজগুলোর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যেনো সেখানে পদায়ন পান। এতে সার্বিকভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান হবে। আর সব সমস্যার সমাধান মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ। 

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ শিক্ষা ক্যাডাররা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি তাই অধিদপ্তরের অখণ্ডতা রক্ষা করার দাবি জানিয়েছে। সমিতির মতে, অধিদপ্তর বিভক্ত হলে সেখানে শিক্ষা ক্যাডারদের পদ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রশাসন ক্যাডারদের হাতে ক্ষমতা চলে যায়। এতে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডার নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা অধিদপ্তরের কথা বলছেন। আলাদা অধিদপ্তর হলে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হবে। যা সর্বস্তরের শিক্ষকদের ভোগান্তি বাড়াবে বলে মনে করছেন শিক্ষা ক্যাডাররা। 

 

 

এইচএসসি পরীক্ষা ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত - dainik shiksha এইচএসসি পরীক্ষা ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত দাবি পূরণ হয়েছে, এখনও কীসের আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দাবি পূরণ হয়েছে, এখনও কীসের আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিলেন শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিলেন শিক্ষামন্ত্রী ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও ফেসবুক নিয়ে বিটিআরসির নির্দেশনা - dainik shiksha ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও ফেসবুক নিয়ে বিটিআরসির নির্দেশনা কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর মেট্রোস্টেশনে সম্ভাব্য ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা - dainik shiksha মেট্রোস্টেশনে সম্ভাব্য ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032927989959717