দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিডিরেন একটি সময়োপযোগী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি একক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। বিডিরেন নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুবিধা নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ জনবল তৈরিতে অবদান রাখছে।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের নাভানা এইচআর টাওয়ারে বিডিরেন- এর নতুন কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিডিরেন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ।
অনুষ্ঠানে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. হাসিনা খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, ইউজিস’র সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসেন ও প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বিডিরেন-এর কার্যক্রম নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্দেশে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউজিসি’র উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ রিসার্স অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন)-এর যাত্রা শুরু হয়। উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিডিরেন-এর কর্মকাণ্ড একটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বিডিরেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিডিরেন থেকে সরাসরি শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা নিতে পারেন বলে তিনি জানান।
তিনি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে জাতীয়ভাবে একটি ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বিডিরেন-এর সহায়তায় ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে পারে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। এসব শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটের জন্য একটি ডিজিটাল সনদের ব্যাংক গড়ে তোলা প্রয়োজন। সনদের ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের সব তথ্যের রেকর্ড থাকবে। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পোর্টফোলিও তৈরিতে বিডিরেন সহায়তা করতে পারে বলে তিনি জানান।
এ ছাড়া, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজসমূহের শিক্ষার মানোন্নয়ন, পাঠদান মনিটরিং এবং এডুকেশন ইকো-সিস্টেম তৈরিতে বিডিরেন-এর সহায়তা নিতে তিনি ইউজিসিসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। ইউজিসি এ লক্ষ্যে কাজ করছে। কাঠামোগত পরিবর্তনে সরকার বিডিরেন প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বিডিরেনকে স্বাধীনভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রফেসর ড. মো. জাকির হোসেন, বিডিরেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ও বিডিরেনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিডিরেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌরিত বিডিরেন ট্রাস্ট - এর গঠন, কার্যক্রম, অর্জন ও লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, রিসার্চ হ্যাভেন’এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিডিরেন এগিয়ে চলছে। বর্তমানে ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে তারা নেটওয়ার্ক, ডেটা, হোস্টিং আইডেনটিটিসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কে বিডিরেনের অবস্থান তৃতীয়। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন বিমান বন্দরে বিডিরেন এডুরোম সেবা প্রদান করছে।