নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার।’
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনগণকে শিক্ষা ও সাক্ষরতার বিষয়ে সচেতন ও উৎসাহী করে তোলা এবং তাদের মানবসম্পদে রূপান্তর করা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মাতৃভাষায় সাক্ষরতা অর্জনের পাশাপাশি এক বা একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশু, কিশোর ও তরুণদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে।
বহুভাষিক সাক্ষরতা দেশ, সংস্কৃতি এবং ভাষার মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করে বলে মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনমান, জাতীয় উন্নয়ন ও শান্তি ত্বরান্বিত হবে। এ বছরের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য সেই লক্ষ্যই তুলে ধরছে।'
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা জাতি গঠনের প্রধান বাহন এবং শিক্ষার প্রথম ধাপ হলো সাক্ষরতা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করি, সাক্ষরতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।'
আরো পড়ুন :শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মতবিনিময় আজ
'আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪' উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি জেনে আনন্দিত যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও 'আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪' উদযাপন করছে।”
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, নীতি-নির্ধারক, অনুশীলনকারী এবং জনগণকে আরও শিক্ষিত, ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ এবং টেকসই সমাজ গঠনের জন্য সাক্ষরতার সমালোচনামূলক গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে বিশ্বব্যাপী ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস (আইএলডি) উদযাপন করা হয়।
সাক্ষরতা সবার জন্য একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি অন্যান্য মানবাধিকার, বৃহত্তর স্বাধীনতা এবং বৈশ্বিক নাগরিকত্ব উপভোগের দ্বার খুলে দেয়।
সাক্ষরতা মানুষের জন্য বৃহত্তর জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, মনোভাব এবং আচরণ অর্জনের একটি ভিত্তি যা সমতা এবং বৈষম্যহীনতা, আইনের শাসন, সংহতি, ন্যায়বিচার, বৈচিত্র্য এবং সহনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে স্থায়ী শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এবং নিজের, অন্যান্য মানুষ এবং পৃথিবীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
এ বছর আইএলডির প্রতিপাদ্য 'বহুভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা'।
ইউনেস্কোর মতে, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সামাজিক সংহতি এবং শান্তির প্রসারের জন্য সাক্ষরতার রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। আজকের বিশ্বে, যেখানে বহুভাষিকতা অনেকের জন্য একটি সাধারণ অনুশীলন, সাক্ষরতার বিকাশ এবং শিক্ষার জন্য প্রথম ভাষা-ভিত্তিক, বহুভাষিক পদ্ধতি গ্রহণ করে মানুষকে ক্ষমতায়ন করা তার জ্ঞানীয়, শিক্ষাগত এবং আর্থ-সামাজিক সুবিধার জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সাম্প্রদায়িক পরিচয় এবং সমষ্টিগত ইতিহাসকে দৃঢ় করার সময় পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।