শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষাডটকম, সাতক্ষীরা |

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ এমপিওভুক্তিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি একই উপজেলায় আছেন টানা সাত বছর। শিক্ষকেরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক রূপক রায়সহ কয়েকজনের কারণে বহাল তবিয়তে আছেন এই কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ এলাকার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের। 

সাতক্ষীরা দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) তথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের কারণে দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাভোগ করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাইদসহ পাঁচ শিক্ষক।

ওই শিক্ষক ও কর্মচারীদের একাধিকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৬৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ওই নিয়োগ ফাইল ছেড়েছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। একই সময়ে প্রভাষক থেকে পদোন্নতি পাওয়া ১৫ জন সহকারী অধ্যাপকের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নেন সাড়ে সাত লাখ টাকা। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ওই নিয়োগ নিয়ে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ২১ শিক্ষকের এমপিও বিধিসম্মত নয় বলে উল্লেখ করে তাঁদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন দুদকের নির্দেশে মাউশির খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক হারুণ-অর-রশিদ সিটি কলেজের যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না বলে উল্লেখ করেছেন। 

এমনকি নিজের স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে চাকরি পাইয়ের দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ জানুয়ারি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হওয়ার আগের দিন তাঁর স্ত্রী জেসমিন নাহারের জন্য নিয়োগ বোর্ড গঠন ও যোগদান দেখানো হয়। এটিও বিধিসম্মত নয় বলে শিক্ষা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

আগে কলেজের শিক্ষকদেরও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রাথমিক আবেদন দিতে হতো জানিয়ে সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাকে বঞ্চিত করে বিধিবহির্ভূতভাবে রুনা লায়লা নামের একজন শিক্ষকের নিয়োগ এবং তাঁর এমপিও বন্ধের জন্য ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করি। কিন্তু তিনি আবেদনটি গ্রহণ করেননি; বরং অপমান করেন।’ 

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় মাউশির প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। প্রতি বোর্ড বাবদ জাহিদুর রহমানকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। উপজেলার সব শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য ব্যানবেইসে পাঠানোর জন্যও তাঁকে ঘুষ দিতে হয় বলে জানা গেছে। 

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ৪৮টি মাদরাসা ও ৫৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর কলেজ রয়েছে ১২টি। শিক্ষক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৪টি নিয়োগ বোর্ড বসে। বছরের হিসাবে সেটা দাঁড়ায় শতাধিক। ৭ বছরে ৭ শতাধিক। এখান থেকে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা ঘুষ-বাণিজ্য করেছেন জাহিদুর রহমান।’ 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ‘সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক রবি নির্বাচনে ফেল করায় একটা গ্রুপ আমাকে নিয়ে এসব কুৎসা রটাচ্ছে।’

জমি কেনা এবং একই উপজেলায় ৭ বছর থাকা প্রসঙ্গে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে চাকরি করি। বেতনের টাকা থেকে জমিয়ে জমি কেনা হয়েছে।’ তবে জমির দাম উল্লেখ করা হিসাবের অর্ধেক বলে তিনি দাবি করেন। আর মাউশি অফিসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় তিনি ৭ বছর একই স্টেশনে আছেন বলে জানান। 

সাতক্ষীরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এলে আমি তাঁকে দ্রুত বদলি হয়ে অন্য জায়গায় যেতে বলেছিলাম।’ 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, একই স্টেশনে ৭ বছর থাকার কোনো নিয়ম নেই। তিনি বিষয়গুলো খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। ওই কর্মকর্তা কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না - dainik shiksha রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী - dainik shiksha মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037069320678711