শিক্ষা কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে খুমেকে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক সংকটশিক্ষা কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে খুমেকে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, খুমেক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, খুমেক : দেশের অন্যতম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক)। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতি ব্যাচে ৫০ শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে চারগুণ। কিন্তু শিক্ষকদের সংখ্যা রয়েছে আগের মতোই। ফলে ব্যাপক শিক্ষক সংকট রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। এর মধ্যে অনেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক চেম্বার প্র্যাকটিসের কারণে বেশিরভাগ সময় থাকেন খুলনার বাইরে। এতে হাতেকলমে চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষায় ফেল করছেন অনেক শিক্ষার্থী। পেশাগত পরীক্ষাগুলোতেও পাসের হার কমছে প্রতিনিয়ত। স্বাস্থ্যশিক্ষার এমন জোড়াতালি পাঠদানে দক্ষ চিকিৎসক তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা জানা যায়, পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সে আটটি মৌলিক ও তিনটি ক্লিনিক্যাল বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দেড় বছরে মৌলিক বিষয় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রির ওপর হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। পরের দুই বছর বাকি পাঁচ মৌলিক বিষয় প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন ও ফার্মাকোলজির ওপর পড়ানো হয়। শেষ দেড় বছরে ক্লিনিক্যাল তিন বিষয় সার্জারি, মেডিসিন ও গাইনি অ্যান্ড অবসের ওপর প্র্যাকটিস সহকারে অধ্যয়ন করানো হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, আটটি মৌলিক বিষয়ের ওপর শিক্ষা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক কলেজে নেই। ওই বিষয়গুলোতে ৬৭ পদ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক আছেন ৫১ জন। এর মধ্যে অ্যানাটমি বিভাগে একজন অধ্যাপক, ফিজিওলজিতেও একজন অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে একটি বায়োকেমিস্টের পদ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া প্যাথলজি বিভাগে এক প্রভাষক, মাইক্রোবায়োলজিতে দুই প্রভাষক, কমিউনিটি মেডিসিনে এক অধ্যাপক, দুজন করে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক, ফরেনসিক মেডিসিনে এক অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক এবং ফার্মাকোলজিতে এক অধ্যাপক ও ফার্মাকোলজিস্টের পদ ফাঁকা রয়েছে। আর ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোতে সম্প্রতি নাক কান গলা এবং মানসিক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের পদ খালি হয়েছে বদলিজনিত কারণে।

এ ছাড়া মেডিসিন সার্জারি ও গাইনি বিভাগের অনেক সিনিয়র শিক্ষক কলেজে আসেন না। কলেজ কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ করে তারা চেম্বার প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন খুলনার বাইরে। তাদের মধ্যে মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বিএম সাইফুল যশোরে থাকেন, নিয়মিত কলেজে আসেন না। গাইনি বিভাগে নতুন একজন অধ্যাপক পদ মর্যাদার শিক্ষক এলেও তিনি খুলনায় আসেননি এখনো। ডেন্টাল বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. অনুপম নির্মাণাধীন খুলনা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষও। মাসে দুই-একবার আসেন খুমেকে। ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডা. মুকিতুল হুদা মাসে অন্তত ১৫ দিন ঢাকায় থাকেন। ইউরোলোজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবিদ ঢাকায় থাকেন।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. দীন উল ইসলাম বলেন, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটি গড়ে ওঠে। তখন প্রতি বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো ৫০ জন। এরপর প্রতিবছর ১৮০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও আগামী বছর আসন সংখ্যা আরও ২০টি বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে। অথচ স্থাপনের বছর শিক্ষকদের যে অর্গানোগ্রাম ছিল, সেটি এখনো বহাল। ফলে একটি বড়সংখ্যক শিক্ষক সংকটে রয়েছে কলেজটি। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে প্রায় তাদের ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। হাতেকলমে শিখতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস, পরীক্ষাসহ প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। কলেজের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রথম বর্ষে প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেন ১৮৭ জন। এর মধ্যে পাস করেন ১৪৮ জন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বর্ষে ১৬৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেন ১২৫ জন ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১৬২ জন অংশ নিয়ে পাস করেন ১৩২ জন।

অন্যদিকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বর্ষে ১৫৩ জনের মধ্যে পাস করেন ১২৪ জন, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ১৫২ জনের মধ্যে পাস করেন ১২১ জন ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৭ জনের মধ্যে পাস করেন ১২৩ জন। বর্তমান এমবিবিএস কোর্সে বিভিন্ন বর্ষে কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮২২।

এ পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য শিক্ষাদানে ঘাটতি থাকায় দেশে অদক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম।

তিনি বলেন, বিষয়টির সমাধান করা অতি জরুরি। আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রতিটি স্তরে সংকটের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কলেজের ভৌত অবকাঠামোও বাড়াতে হবে। অথচ কোনো বিষয় তোয়াক্কা না করে বারবার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এতে মান উপযোগী শিক্ষার অভাবে প্রতিবছর নিম্নমানের চিকিৎসক বের হচ্ছে। এর সমাধানে এখন আমাদের আন্দোলনে নামতে হবে।

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038700103759766