মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষকরা। তারা অভিযোগ করেছেন, অধিদপ্তরে কর্মরত কিছু শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তার কারণে চাকরি-সংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা ‘হিংসা’ করে নানা অজুহাতে তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করছেন বলে মনে করছেন সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে শিক্ষক হয়রানীকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দপ্তর পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা পরিষদ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম শামীম, সদস্যসচিব মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম, সদস্য মোহাম্মদ আবু সায়েম। সংগঠনটি বেসরকারি কলেজ থেকে সরকারি হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত।
সংবাদ সম্মেলন থেকে এক মাসের মধ্যে চাকরি নিয়মিতকরণ, কলেজ জাতীয়করণের তারিখ থেকে নিয়মিতকরণ, যোগ্যতা অর্জনকারী শিক্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি দেয়াসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বলেন, আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ এর আলোকে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। এর মাধ্যমে কলেজ সরকারি হওয়ার পর বিসিএস ক্যাডারের প্রয়োজনীয় (কাম্য) যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকেরা ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু তাদের অনেকের চাকরি নিয়মিতকরণ করা হচ্ছে না। যেটি চাকরি সংক্রান্ত কাজে খুবই প্রয়োজন। অনেকের ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত নিয়োগ হয়ে গেলেও নিয়মিতকরণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা কাজটি করছেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন। ২৭টি কলেজের ৬ শতাধিক শিক্ষক নিয়মিতকরণের এ সমস্যায় আছেন। এ ছাড়া স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতিতে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক নেতারা।
তারা বলেন, ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক নিয়মিতকরণ পরবর্তী সরাসরি বিসিএস নিয়োগকৃত শিক্ষকদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অনেক পূর্বে এফটিসি সম্পন্ন করে স্থায়ীকরণের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয়ের চক্রান্তে ক্যাডারে আত্মীকৃত সিনিয়র শিক্ষকদের হতাশ করে গত ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৯৪ জন জুনিয়র প্রভাষককে স্থায়ীকরণ করেছে। যোগ্য সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে চরম অন্যায় ও তাদের মানহানি করা হয়েছে। ২০০০ বিধিতে আত্মীকৃত প্রায় ১০০ জন স্থায়ীকরণকৃত শিক্ষককে অনাকাঙ্খিতভাবে বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চিত রেখেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতি নির্ধারকরা।
তারা আরও বলেন, ২০০০ বিধিতে ক্যাডারে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকদের প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে ওই বিধিতে ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক প্রভাষক নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে চলে গেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আপনার দেয়া মর্যাদা থেকে বঞ্চিত অবস্থায় জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের শতভাগ সুবিধা না পেয়ে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ওই সব কর্মকর্তা কারা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার প্রতি ইঙ্গিত করেন। যারা এখন শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান।
সরকারিকৃত কলেজগুলোর শিক্ষকরা আট দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো, নিয়মিতকরণ বঞ্চিতদের ১ মাসের মধ্যে নিয়মিতকরণ, কলেজ সরকারিকরণের তারিখ থেকে নিয়মিতকরণ কার্যকর করা, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের দ্রুত স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি দেয়া, পঞ্চাশোর্ধ্ব শিক্ষকদের প্রমার্জনের বিধানমাফিক দ্রুত স্থায়ীকরণ করা, নিয়মিতকরণ ও স্থায়ীকরণ বঞ্চিত যেসব শিক্ষক অবসরে দিয়ে ২০ শতাংশ আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের মানবিক দিক বিবেচনায় দ্রুত স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শতভাগ আর্থিক সুবিধা দেয়া, শিক্ষক হয়রানীকারী ও বঞ্চনাকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দপ্তর পরিবর্তন করা এবং সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের মানবিক ও শিক্ষকদের প্রতি সহনশীল হওয়া।