আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে ফের কর্মবিরতি শুরু করছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা চলবে। তিন দিন সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। এ কর্মসূচির ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। শিক্ষা প্রশাসনের কেন্দ্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডগুলো, এনসিটিবি, নায়েম ডিআইএসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে। ফলে তাদের কর্মবিরতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে স্বাভাবিক কাজ চালু রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে আগামী শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। তাই আক্ষরিকভাবেই আগামী শনিবার পর্যন্ত অচল থাকবে শিক্ষা প্রশাসন।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দপ্তরগুলো ও সরকারি কলেজগুলোসহ সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে এ কর্মসূচি চলছে। কলেজগুলো তাদের নির্ধারিত কর্মসূচিগুলো পিছিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে। দপ্তরগুলোয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কোনো ফাইলে সই করছেন না। ফলে সরকারি কলেজ-শিক্ষার দপ্তরগুলো অচল। এ অচলাবস্থা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত।
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সকল সরকারি কলেজ, সরকারি আলীয়া মাদরাসা, সরকারি টিটি কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, সব শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, নায়েম, ব্যানবেইসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা সর্বাত্মক কর্মাবরতি পালন করছেন। ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সকল ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, এবং দাপ্তরিক সব কর্মকাণ্ড কর্মবিরতির আওতায় থাকবে।
শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকদের দাবিগুলো হলে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি দেয়া এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডসহ প্রয়োজনীয় পদসৃজন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের জন্য বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস-১৯৮০ পরিপন্থি সকল নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার, জেলা-উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার পরিচালিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও চাকরির ৫ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেয়া।
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায়-জেলায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
গতকাল সকালে শিক্ষা ক্যাডাররা ঝালকাঠি সরকারি কলেজে কর্মবিরতি অংশ নেন। ঝালকাঠি সরকারি কলেজ ইউনিটির সভাপতি অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক শুকদেব বাড়ৈ, ঝালকাঠি জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইলিয়াস বেপারীসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা বলেন, বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এই পেশার কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হয়েছে। অপেশাদাররা এই পেশাকে গ্রাস করছে। শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে চতুর্থ গ্রেডের ওপর কোনো পদ নেই। শিক্ষা ক্যাডারে সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক পদটি চতুর্থ গ্রেড হওয়ায় পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ নেই। তাই অধ্যাপকটি তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের পদ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তারা আরো বলেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নতুন পে-স্কেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডাররা। আমাদের পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটির বিষয়ে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি প্রদান করলেও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে এটি আলোর মুখ দেখেনি। তাই সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের দাবি আদায়ে জরুরিভাবে একটি দক্ষ, যুগোপযোগী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা সময়ের দাবি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে জয়পুরহাট সরকারি কলেজেও শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে অংশ নেন। জেলা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক কাজী ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আ. জলিল, কোষাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক তৌফিকুর রহমান সরকার, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের, মাসুদুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।