৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। কাগজে-কলমে বর্তমানে ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি কলেজে কর্মরত। ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ শিক্ষকের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি কোচিং ব্যবসায় জড়িত। কোচিংয়ে ছাত্র ভর্তি, ক্লাস নেয়া বা মার্কেটিং-সব কাজেই সম্পৃক্ত শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তা।
তার নাম মো. ইমাম হোসেন ইমন। কোচিং শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ‘ইমন ভাইয়া’ নামে। তাকে একটি কোচিং সেন্টারের মডেল বয় হিসেবেও চেনেন কেউ কেউ। নিজেকে তিনি ওই কোচিং এর কোর্স কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে পরিচয় দেন।
যদিও শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাডারে চাকরি করে অন্য কোনো কোচিং ব্যবসা বা অন্য চাকরিতে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ নেই।
দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে মো. ইমাম হোসেন ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে একজন ছাত্রীকে তার কোচিংয়ে ভর্তির জন্য পরামর্শ চাওয়া হয়। তিনি তার সঙ্গে ওই কোচিং সেন্টারটির ফার্মগেট শাখায় দেখা করতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুলাই মাসে সারাদেশে ওই কোচিং এর বিভিন্ন ব্রাঞ্চের মার্কেটিং করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছিলেন ‘ইমন ভাইয়া’। গত ১৯ ও ২৮ জুলাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও এ ধরনের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের এ সাবেক শিক্ষার্থী ছাত্রজীবন থেকেই কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারটির একটি সূত্র জানায়, এক সন্তানের জনক হলেও ইমন ভাইয়া কোচিংয়ে নিজেকে সিঙ্গেল বলে দাবি করেন।
দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে শিক্ষা ক্যাডার মো. ইমাম হোসেন ইমন বলেন, ছুটির দিনে কিছুটা সময় দিই। এটা চাকরিবিধি পরিপন্থি নয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত থেকে কেউ কোচিংয়ে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। তবে এ ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছু্ই করার নেই। আমরা বড়জোড় এসিআরে বিরূপ মন্তব্য লিখতে পারি, এতোটুকুই।
এ বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে যোগাযোগ করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, কোনো অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সরকারি কোনো নির্দেশনা না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।
বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এর গোচরে আনা হলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তার কোনো কোচিং বা এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে সতর্ক করবো। এসিআরে বিরূপ মন্তব্যে ক্যাডার কর্মকর্তার প্রমোশন আটকে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, এই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ইউসিসি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।