শিক্ষা খাতে সিএসআরের টাকার ব্যয় প্রসঙ্গে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা খাতে সিএসআরের টাকার ব্যয় প্রসঙ্গে

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি তথা সিএসআরের জন্য বরাদ্দের টাকা কোন খাতে এবং কীভাবে ব্যয় করবে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জারি করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে ব্যয়ের খাত হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত প্রশমন, অভিযোজন এবং অন্যান্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা যে যথাযথ মানছে না– নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেই তা স্পষ্ট। প্রতিবেদনমতে, দেশের ব্যাংকগুলো সিএসআর তহবিল থেকে শিক্ষা খাতে গত বছর ব্যয় করেছে মাত্র ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যদিও এ ক্ষেত্রে ব্যয় করার কথা ছিল মোট বরাদ্দের ৩০ শতাংশ। সোমবার (১ এপ্রিল) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।   

 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ব্যাংকগুলোর সিএসআর তহবিল থেকে শিক্ষা খাতে ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা মূলত শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে। ঠিক কী কারণে এটা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে এতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে যেসব দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৃত্তির ওপর নির্ভরশীল; প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন সিদ্ধান্তের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকেই। উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েও অনেকেই যে অর্থের অভাবে সংকটময় শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করছেন, তাও বলা বাহুল্য।

উল্লেখ্য, সিএসআর খাতে বরাদ্দের উদ্দেশ্য হলো, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বিদ্যমান ক্ষোভ প্রশমন, অসমতা ও দারিদ্র্য বিমোচন। ব্যাংকগুলোর সিএসআর খাতে বরাদ্দের যাবতীয় তথ্যই থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিএসআরের টাকার সিংহভাগই গত বছর ব্যয় হয়েছে ‘অন্যান্য’ খাতে। পাঁচ বছর আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ প্রবণতা বিরাজমান। প্রশ্ন হলো, এ সময়ে সিএসআর তহবিল থেকে ব্যয়-সংক্রান্ত নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিতে কী উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক? নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান যদি ওয়াকিবহাল হয়েও বিষয়টি উপেক্ষা করে, তাহলে কোনো নিয়মনীতির পরিপালন নিশ্চিত করা কঠিন।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এটাও স্পষ্ট, সিএসআর খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি ব্যাংকগুলোর বরাদ্দও নামমাত্র। এ ক্ষেত্রে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথ পরিপালন করছে না। প্রশ্ন হলো, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো এ খাতে ব্যয়ের জন্য সদিচ্ছা দেখালেও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো পিছিয়ে থাকছে কেন– তাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খতিয়ে দেখা দরকার। এ নির্দেশনার যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা না হলে যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে, তারা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও কমালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এতে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ব্যাহত হবে বৈ কি।

দরিদ্র পরিবারের কোনো কোনো সন্তান পরীক্ষায় ভালো ফল করলে কিংবা ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলে খরচ জোগানোর জন্য তারা তাকিয়ে থাকেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৃত্তির দিকে। ব্যাংকগুলো যদি সিএসআরে ব্যয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমায়, তাহলে স্বভাবতই বৃত্তিপ্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। অন্যদিকে তারা এ তহবিলে বরাদ্দ বাড়ালে তাতে সুবিধাভোগী এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এটা অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলো  নির্দেশনা অনুযায়ী সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে কিনা– নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো দরকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের স্বার্থেই।

লেখক: ফরহাদ জাকারিয়া, ব্যাংক কর্মকর্তা

অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064191818237305