শিক্ষার বাজেটে সরকার শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন। শিক্ষা খাতের বাজেটের বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিক্ষা এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের (ইআরআই) উদ্যোগ আয়োজিত ‘শিক্ষা বাজেটে শুভংকরের ফাঁকি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সাড়ে ৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো ১৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮৮ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি খাত যোগ করলে তা দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা বাজেটে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ বা জিডিপির ২ দশমিক ০৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো জানিয়ে তিনি বলেছেন, একেই বলা হয় শুভংকরের ফাঁকি।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও ইআরআই চেয়ারম্যান আরো বলেন, প্রতি বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করা হয় সেগুলো সার্বিকভাবে মোকাবিলা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যার জন্য চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কিন্তু আমরা যদি অর্থনীতি, কর্মসংস্থান বা রেমিটেন্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন কিংবা আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করতে চাই তাহলে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষা সংস্কার ও শিক্ষা বাজেটে। প্রত্যাশা আকাশচুম্বী আর প্রাপ্তিতে তুষ্ট কিনা জানি না। তবে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ, এ যেন বিরাট পাওয়া। মূলত ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমাদের দেশে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ পেতে হলে দেশের উপযুক্ত কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ ধাপে সারা বিশ্ববাসীকে তা মোকাবিলা করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, রোবোটিক্স ও ন্যানো টেকনোলজির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। এমনকি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আয় প্রবাসীদের মাধ্যমে উর্পাজিত হলেও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মানবসম্পদ ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যর্থ হই তাহলে বুমেরাং হবে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ। কিন্তু তারপরও বাজেটে এর প্রতিফলন হয়নি।
ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, বাজেটে কোভিড ১৯ এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে নানামূখী ক্ষতির মুখে পড়েছে তার জন্য ২-৩ বছর মেয়াদী একটি শিক্ষা পুণঃউদ্ধার কর্মসূচি বাজেটের প্রয়োজনীয়তা ছিলো। অপরদিকে বিগত দিনের শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট এবং সুপারিশমালা যদি পর্যালোনা করি, তাহলে সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায় থেকে সক্রিয় দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আদৌ প্রতিয়মান হয়নি। এবারের বাজেটেও করোণাকালীন শিক্ষায় ক্ষতি পূরণের দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলনসহ বিএনপিপন্থী শিক্ষাবিদরা।