শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেছেন, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। তিনজন শিক্ষক জেলে একজন পলাতক। আমরা কাকে বিশ্বাস করবো? দুর্ভাগ্য এসব শিক্ষকদের অ্যারেস্ট না করে পানিনি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে বুধবার এসব কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ অডিটোরিয়ামে জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন কৌশল পরিকল্পা কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অংশীজনের সঙ্গে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সচিব বলেন, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। আজ শুদ্ধাচার নিয়ে কথা বলছি। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের শিক্ষককে অ্যারেস্ট না করে পারিনি। এ লজ্জা নিয়ে আমরা আজ এখানে কর্মশালা করছি। তিনজন শিক্ষক জেলে একজন শিক্ষক পলাতক। আমি কার ওপর বিশ্বাস করবো। প্রশ্নপ্রত্র আনা নেয়ার দায়িত্ব যার ওপর দিলাম শুনলাম উনি বেশভুসায় ইসলামিক মানুষ। কোথায় বিশ্বাস করবো? ছাত্ররা কী শিখবে? শিক্ষকদের তো আমরা শাসন করতে পারি না। আমাদের একটা জাগরণ দরকার, রেনেসা দরকার।
আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, সুশাসনের জন্য কথা বলছি। ফকির লালন বহুদিন আগে বলে গেছেন-সত্য কাজে কেউ নয় রাজি। এটাই আমাদের সমস্যা। শুদ্ধাচার হলো-গুড গভর্নেন্সের একটি টুল। আমরা যদি সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে নিজেদের আচরণ শুদ্ধ হতে হবে। নিজেদের বিশুদ্ধ হতে হবে। এর বাইরে শুদ্ধাচারের কিছু নেই।
শিক্ষক ও অংশীজনের উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, যদি বিশুদ্ধ শিক্ষা না দিতে পারি, নিজেদের মনকে বিশুদ্ধ না করতে পারি তাহলে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া যাবে না। আমাদের ভালো কারিকুলাম নেই, যা আছে তা কারিকুলামের মধ্যে পড়ে না। তৃতীয়ত আমাদের দরকার ভালো এসেসমেন্ট সিস্টেম।
সচিব বলেন, কয়জন টিচারের কোয়ালিটি আছে? সেসিপে আছে গবেষণা কর্মকর্তা, উনাদের কি গবেষণা কোয়ালিটি আছে? রিসার্চ ম্যাথডোলজি কী জিনিস জানেন? তাহলে উনি কী গবেষণা করবেন? আমাদের ৪১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এছাড়া অন্যান্য কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের কোয়ালিটি সঠিক আছে কিনা? আমরা এখন কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক করছি। কিন্তু বাঁশি যে বাজাবে, তাকে বাঁশি বাজানো শেখাচ্ছি না। তাকে শেখাচ্ছি বাঁশি লম্বা কতটুকু, বাঁশির ছিদ্র কয়টা, বাঁশি দেখতে কেমন এসব শেখাচ্ছি। বাঁশি বাজানো প্র্যাক্টিস ছাড়া কেউ শিখতে পারে না। এটা কিন্তু করাচ্ছি না।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, দুর্নীতির একটা ভয়ংকর চক্র সারাদেশে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো আমরা যারা শুদ্ধাচরের কথা বলি তারাই ভয়ঙ্কর অসৎ। ঘুষ যাতে না খায় সে জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আমরা গৎবাঁধা কথা বলে গেছি। একটু চেঞ্জ হলে এগুতে বেশিদিন লাগবে না। আমরা অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগার হয়ে গেছি। ভাই আপনার এতো আওয়ামী লীগার হওয়া দরকার কী? আপনি আপনার কাজ সুষ্ঠুমতো করেন। আমরা মুখে বলি কিন্তু নিজে বিশ্বাস করি না। আমি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে অনেক চেষ্টা করেছি, ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেছি। জায়গা নেই, জমি নেই, ২৭টি প্রতিষ্ঠান আমি বন্ধ করে এসেছি। আরও আছে। বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো আর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করবো না। আমরা সবাই চাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে। আমরা শিক্ষিত হয়েছি কিন্তু সোনার মানুষ হইনি।