ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের শিশু ফয়সাল হত্যা মামলার সেই তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বপ্নযোগে মরদেহ পাওয়ার রহস্য খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টার দিকে জননিরাপত্তা বিভাগের আইন অধিশাখার যুগ্মসচিব এসএম ফেরদৌস এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তপূর্বক বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর লিখিত অনুরোধ জানান। জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড-১) বেলাল উদ্দিনের দপ্তরে পাঠানো হয়।
জানা যায়, বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নিহত ফয়সালের বাবা শেখ আব্দুস সাত্তার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অভিযোগটির ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা বিভাগের আইন অধিশাখায় পাঠানো হয়।
২০১১ খ্যিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল নিখোঁজ হয় ডুমাইনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল (১০)। এরপর তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলে জাহাঙ্গির আলম পলাশ ও মুরাদ বিশ্বাস নামে দুজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের দুদিন পর ১৫ মে ওই গ্রামের পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেফটিক ট্যাংকে পাওয়া যায় ফয়সালের মরদেহ।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল দে জানান, তিনি স্বপ্নযোগে ওই মরদেহের সন্ধান পান। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তদন্তের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে পরিদর্শক মোহাম্মদ আলীকে তদন্তভার দেওয়া হয়। এ মামলার তদন্তকালে ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলী নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে (বর্তমানে মৃত) গ্রেফতার করেন। তবে তিনি এজাহারভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম পলাশ ও তদন্তে প্রাপ্ত আসামি মুরাদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। নজরুল ইসলাম নজুকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন। পরে নারাজি আবেদন করলে উচ্চ আদালত মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পর মামলার তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্ত শেষে ২০২২ খ্যিষ্টাব্দের ৩ জুলাই সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে জানান, জাহাঙ্গীর আলম পলাশ ঘটনার দিন ফয়সালকে কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে মুরাদের চালিত মোটরসাইকেলে তোজাম বিশ্বাসের রাইচ মিলে নিয়ে যান। সেখানে তোজাম বিশ্বাসের সহায়তায় তাকে হত্যা করেন।
মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী ডুমাইন পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাইটগার্ড মো. জসিম উদ্দিনের সহায়তায় সেফটি ট্যাংকের ভেতর ফেলে দেন।
কবিতা রানী (৩৫) নামে নামে এক নারী বলেন, তার বাড়ি ওই সেফটি ট্যাংকের পাশেই। মরদেহ উত্তোলনের দিন খুব সকালে এসআই বিপুলকে প্রথমে একা ওই স্থানে আসতে দেখেন। এরপর পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে তিনি মরদেহ তুলেন।
নিহত শিশুর ভাই নাসিরুদ্দিন বলেন, এ মামলায় ন্যায়বিচারের আশায় আমরা এখনো প্রতীক্ষায়। আসামি তোজামের জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তাকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, ভাইয়ের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম জানান, ফয়সালের মরদেহের সন্ধান কীভাবে মিললো সে রহস্যই জানা হলো না। মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার এসআই বিপুল দে মরদেহটি উদ্ধার করেন। তবে মরদেহের সন্ধান কীভাবে পেলেন সেকথা জানতে চাইলে এসআই বিপুল জানান, স্বপ্নযোগে এটি জেনেছেন! এটি কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তার গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হতে পারে না।