দৈনিকশিক্ষাডটকম, ফেনী: প্রতিনিধি ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্বাচনী প্রচারণায় শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বার্ষিক পরীক্ষার পর গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের শীতকালীন অবকাশ থাকলেও শিক্ষকদের মাধ্যমে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে তাদের প্রচারণায় বাধ্য করা হয়। অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর ধর্মপুর আমিন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে তিনি স্কুলের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রচারণায় এনেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ধর্মপুর আমিন বাজারে নৌকার গণসংযোগ ও পথসভায় সেই এলাকার আমিন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়া বাকিদের সড়কে দাঁড়িয়ে নৌকার শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, এখন বিদ্যালয় বন্ধ। শিক্ষার্থীদের অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। প্রচারণায় যারা অংশ নিয়েছে সকলেই আমার নাতি-নাতনী এবং আত্মীয়-স্বজন। তারা দলকে ভালোবেসে এসেছেন।
৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আপনার আত্মীয়স্বজন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রচারণায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমাদের পরিবারের সাথে এমপির পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে বিধায় অনেকে এসেছে। এমন অভিযোগ সত্য না, কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যাচার করছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিবি আয়েশা আক্তার সূবর্ণা বলেন, আমাদের ক্লাসে ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী আছে। এরমধ্যে অল্প কয়েকজন মেয়ে আসলেও ছেলেরা সবাই এসেছে। আমাদের স্যাররা আসতে বলেছেন, সেজন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও আমরা এসেছি।
প্রচারণায় অংশ নেওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতা নূর রুপা বলেন, আমাদের এখানে সুন্দর অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেজন্য নিজাম হাজারীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে এসেছি। আমাদের স্যার ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে এসেছি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে নিজাম হাজারীকে বরণ করে নেয়ার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
সহকারী শিক্ষক সমির কুমার আচার্য জানান, প্রচারণায় শিক্ষকদের অংশগ্রহণে আচরণবিধির বিষয়ে তার জানা নেই। স্কুলের পাশে এমপি মহোদয় আসছেন, এজন্য যাওয়ার প্রয়োজনবোধ হওয়ায় অংশ নিয়েছি। কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শফি উল্লাহ জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। শিক্ষকরা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন। তারা কেন সেখানে যাবেন। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
ফেনী-২ আসনের মিডিয়া সেলের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ মিলন জানান, স্কুলের ছুটিকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেয়ার বিষয়টি সামাজিকভাবে দেখা হবে। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নয়। এমপি মহোদয় এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন বিধায় তাকে ভালোবেসে দল-মত নির্বিশেষে সবাই যোগ দিয়েছে। তবে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি মন্তব্য এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, নির্বাচনে শিশুদের ব্যবহার আচারণবিধি লঙ্ঘন। এ বিষয়ে প্রার্থীদের আগেই অবগত করা হয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারণায় শিশুদের ব্যবহার হয়েছে কিনা তা নির্বাচনী মনিটরিং টিম খতিয়ে দেখবে, এমন কোনো অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।