দিন যত যাচ্ছে নারীরা ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসার পরিচালনার আর্থিক দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিচ্ছেন তারা। তাই একটি আধুনিক সমাজে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে সামলাতে হবে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের উচ্চ আদালত মুম্বাই হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি নিতিন সামব্রে ও বিচারপতি শর্মিলা দেশমুখ একটি মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণ দেন।
এদিন দাম্পত্য বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলা খারিজ করে দেন এই দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
যে পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন মুম্বাই আদালত, সেটির বাদি ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ—স্ত্রী সারাক্ষণ নিজের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপে ব্যস্ত থাকেন এবং ঘরের কোনো কাজ করতে চান না।
অন্যদিকে তার স্ত্রী আদালতের শুনানিতে জানিয়েছেন, তাদের বিয়ে হয়েছে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে। স্বামী ও তিনি উভয়েই চাকরিজীবী এবং প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে বাসায় ফেরেন। কিন্তু অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর প্রতিদিনই তার স্বামী তাকে ঘরের কাজকর্ম করার জন্য চাপ দেন এবং তিনি যখন নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, তখন স্বামী দুর্ব্যবহার করেন।
ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, স্বামী তার কাছ থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকেন এবং কোনো অজুহাত পেলেই গায়ে হাত তোলেন।
এর আগে পারিবারিক আদালতে নিজের অভিযোগ জানিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু ওই আদালত তার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় মুম্বাই হাইকোর্টে পিটিশন করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সেই পিটিশন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, “বাদি যে অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং ভিত্তিহীন। আধুনিক সমাজে ঘরের কাজকর্ম সামলানোর দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই। স্ত্রী একা সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম নিজের কাঁধে তুলে নেবেন— এমন চিন্তাভাবনা কেবল আদিম নয় বরং নেতিবাচক এবং আধুনিক সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন।”
‘আর এটাও সত্য যে, বিবাহিত যুগলের একজন যদি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান, সেক্ষেত্রে অপরজনের তাতে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বরং আমাদের মতে, যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে নিজের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বাধা দেন, সেক্ষেত্রে তিনি আসলে তার স্ত্রীকে একপ্রকার মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখছেন।’
সূত্র: এনডিটিভি