প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা‘র জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এবারের জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর অন্যান্য বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে ইউএনজিএ’র সাধারণ আলোচনায় অন্যান্য বছরের মতো বাংলায় ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিলো টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।
তিনি ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মত তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ এর ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তার লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে-শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহে না মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।