শেকৃবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

শেকৃবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষাডটকম, শেকৃবি |

নম্বর টেম্পারিং, প্রভাব খাটানো, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ।

জানা গেছে, অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমের ‘কাছের লোক’ দাবি করে অনুষদে প্রভাব খাটাতেন। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। সেগুলো দেখিয়ে অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন। এ ছাড়া নতুন কোনো উপাচার্য এলেই তার ‘কাছের লোক’ হয়ে যেতেন সাইফুল ইসলাম। নিতেন সুযোগ-সুবিধা।

অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টানা ১২ বছর মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি ডিপার্টমেন্টে খায়রুল ইসলাম নামে এলাকার একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। যদিও অন্য দুই প্রার্থীর চেয়ে তার নিয়োগ করা প্রার্থীর সিজিপিএ কম ছিল।

এ ছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন অধ্যাপক সাইফুল। তার একটি প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ড. সাইফুল ইউজিসির নিয়মবহির্ভূতভাবে সদ্য উত্তীর্ণ ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কার্যদিবসে অনুপস্থিতির জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা করে ১ লাখের বেশি টাকা জরিমানা হিসেবে কর্তন করেছেন। সেই টাকা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তা জানেন না শিক্ষার্থীরা। তবে ডিন অফিসের দাবি, জরিমানার এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ শাখায় জমা আছে।

অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, সপ্তম ব্যাচের ইন্টার্নশিপে প্রতিদিন অনুপস্থিতি থাকার জন্য ভাতা থেকে ৫০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে। এর আগে এই অনুষদে ছয়টি ব্যাচ ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কখনো অনুপস্থিতির জন্য অর্থ কর্তন করা হয়নি।

হাতে আসা একটি নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের ‘মাস্টার্স ইন মেডিসিনের’ জুলাই-ডিসেম্বর-১৯ সেশনের অ্যাপ্লাইড এপিডেমিলোজি (এমইপিএইচ-৬১৮) কোর্সের ১৫-০৫৮৭৯ নম্বর রেজিস্ট্রেশনের এক শিক্ষার্থী ৪০ নম্বরের (২০ ক্লাস টেস্ট+২০ অ্যাসাইনমেন্ট) ক্লাস পরীক্ষার উত্তরপত্রে শূন্য (০) নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু ফাইনাল মার্কশিটে তাকে এ-প্লাস দিয়ে পাস করিয়ে দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামের নিজের এলাকার। তার নাম মো. আকিব জাবেদ। অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসা আকিব জাবেদ সম্প্রতি ওই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগের প্রত্যেক ব্যাচে সাইফুলের বিশ্বস্ত কিছু শিক্ষার্থী থাকে। অন্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে কোনো সমালোচনা করলে তার স্ক্রিনশট সাইফুলের কাছে পাঠান তারা। আর সেটা নিয়ে ভাইভায় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া এবং হুমকি দেওয়ার নজির রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত আমাদের নিজেদের মেসেঞ্জার গ্রুপে দিয়েছিলাম; কিন্তু সেসব তথ্য ডিন স্যার সংগ্রহ করে আমার ওপর ভাইভা পরীক্ষায় চড়াও হয়েছেন।’

এ ছাড়া ব্যক্তিগত আক্রোশে ১২ জনকে ফেল করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফেল করা শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শুধু আমাদের অন্যায় জানতে চাই। আমাদের বাকি ৯ সেমিস্টারের রেজাল্ট দেখুন। ইন্টার্নশিপের পারফরম্যান্স দেখুন। বাকস্বাধীনতা হরণ করে স্বৈরাচার ডিন আমাদের ফেল করিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, মাস্টার্সের দুই থিওরি সেমিস্টারে কে বি এম সাইফুল স্যারের চারটি কোর্স ছিল; কিন্তু এই দুই সেমিস্টারের পুরো এক বছরে তিনি কোনো ক্লাস নেননি। ক্লাস না নিয়েই তিনি ওই সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নিয়েছেন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা নম্বর টেম্পারিং বা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক একটি বিভাগের প্রধান হন। আমাদের বিভাগে এ দীর্ঘ সময়ে কোনো সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক বর্তমান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ দায়িত্বে আমাকে এত দীর্ঘ সময় রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইন্টার্নশিপে জরিমানার বিষয়টি কখনো একক সিদ্ধান্তে গৃহীত হয় না। বরং ইন্টার্নশিপের একটা বোর্ড থাকে; সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয়। তা ছাড়া এ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত গেছে।’

সম্প্রতি অনুষদটির বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ডিন কে বি এম সাইফুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সামনে এনে পদত্যাগের দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা একাধিক বার আলটিমেটাম দিলেও তিনি পদত্যাগ করেননি।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031490325927734