শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এর দালিলিক প্রমাণ নেই - দৈনিকশিক্ষা

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এর দালিলিক প্রমাণ নেই

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

সম্প্রতি ‘জনতার চোখ’ নামে একটি সাপ্তাহিক বাজারে এসেছে। সেই সাপ্তাহিকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। প্রতিবেদনটি হুবুহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কি করেন নি এই নিয়ে বিতর্ক এখনো জারি রয়েছে। হয়তো অনেক দিন থাকবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার দাবি করেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন।

প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন।

শেখ হাসিনার জমানায় বঙ্গভবন ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ। স্যার, আপনি কেমন আছেন? ভাই, আপনি আমাকে স্যার বলবেন না। আমরা তো দু’জনই একসঙ্গে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। আমি পাবনায় আর আপনি ঢাকায়। বাংলার বাণীতে দু’জনই কাজ করেছি। পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ জায়গা করে নিলো অনেকক্ষণ। স্বাভাবিক হতেই প্রশ্ন করলাম আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি। ৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।

প্রেসিডেন্ট বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর। সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।

প্রেসিডেন্টের পাঠানো রেফারেন্সের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ই আগস্ট এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। এতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।

এর আগে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অবস্থান করছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভারত সরকার তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে। তা দিয়ে তিনি অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন। যদিও তার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত তাকে নিরাপত্তাজনিত কারণে আশ্রয় দিতে রাজি হচ্ছে না। কাতার ও সৌদি আরব আগেই অপারগতা জানিয়েছে। শুরুতে বেলারুশের কথা বলা হয়েছিল। কি কারণে সেটা হয়নি তা এখনো অজানা।

হাসিনাকে যে কথা বলতে দেয়া হয়নি

পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছিলেন- দীর্ঘ নয়, অল্প সময় কথা বলবেন তিনি। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সেনাপ্রধানের অনাগ্রহে সে সুযোগ পাননি শেখ হাসিনা। তখন তাকে বলা হয়, চারদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সবাই মারমুখো। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা গণভবনে পৌঁছে যেতে পারে। তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাকে সে সুযোগ দেয়া যাবে না। হাসিনা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বক্তৃতার একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন তিনি। নানা সূত্রে জানা যায়, এতে তিনি বলতে চেয়েছিলেন- তার ইচ্ছায় নয়, বলপূর্বক তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। কারা এবং কোন বিদেশি শক্তি তার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে এটাও তিনি দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। তাঁর শাসনকালে দেশের কি কি উন্নয়ন হয়েছে তারও বয়ান ছিল। সকাল থেকে দুপুর, এ সময় নানাভাবে দরকষাকষিও চলছিল। বারবার ফোন আসছিল নয়াদিল্লি থেকে। বলা হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকার তরফে দিল্লিকে বলা হয়েছিল- তারা যেন বিমান পাঠিয়ে হাসিনাকে নিয়ে যান। সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি। এরপর বাংলাদেশের স্ব-উদ্যোগে বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমানে তাকে দিল্লি পাঠানো হয়। হাসিনাকে বহনকারী বিমানে আরও দু’জন ছিলেন। তার ছোটবোন শেখ রেহানা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

শিক্ষক নিবন্ধনে ভাইভার নম্বর যুক্ত না করা কেন অবৈধ হবে না - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধনে ভাইভার নম্বর যুক্ত না করা কেন অবৈধ হবে না শিক্ষার ধাপে ধাপে তিন বছরে ঘুষ বেড়ে দ্বিগুণ - dainik shiksha শিক্ষার ধাপে ধাপে তিন বছরে ঘুষ বেড়ে দ্বিগুণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক - dainik shiksha ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহায়ক দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন শিক্ষার্থীর ৪ শিক্ষক, শতভাগ ফেল টানা তিনবার - dainik shiksha তিন শিক্ষার্থীর ৪ শিক্ষক, শতভাগ ফেল টানা তিনবার সাফল্য-সংগ্রামে উনিশ বসন্ত পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha সাফল্য-সংগ্রামে উনিশ বসন্ত পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের - dainik shiksha বৈষম্য নিরসনে একগুচ্ছ সুপারিশ সরকারিকৃত শিক্ষকদের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038430690765381