শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে পাঠদান নেওয়ার আগে শিক্ষক ছাত্রীদের দাঁড় করিয়ে জানতে চান কারা বিএনপির সমর্থক আর কারা আওয়ামী লীগ। শিক্ষকের এ ধরনের প্রশ্নে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে ছাত্রীরা। এ সময় এক ছাত্রী প্রতিবাদ করে বলে উঠে ‘স্যার এইখানে দল নিয়ে কথা না বলাই ভালো, ক্লাস করান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষক ছাত্রীর কাছে গিয়ে বলেন,‘বুঝতে পারছি তর বাপ কি করে, বাড়িত গিয়া কইছ, তর বাপের পাও দুইডা কাইট্ট্যা লটকাইয়া তইয়াম।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত খালবলা বাজার বালিকা বিদ্যালয়ে আজ রবিবার সকালে ক্লাস বর্জন করে একজন শিক্ষকের অপসারণ দাবি করলে, সেখানে গিয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী হাবিবা আক্তার নামে এক ছাত্রী ওপরের কথাগুলো বলে।
খবর পেয়ে দুপুরে উচ্চবিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রীরা ইংরেজি শিক্ষক নূর মোহাম্মদের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করছে। কিছু বহিরাগত তরুণ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এ সময় এ প্রতিবেদক কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
তাদের মধ্যে মোছা. তৈয়বা খানম, হাবিবা আক্তার, লিলীমা জাহান জানায়, গত ২১ আগস্ট বুধবার নবম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছিলেন নূর মোহাম্মদ স্যার। তখন তিনি তাদের কাছে জানতে চান, আমাদের মধ্যে কে কে আওয়ামী লীগ করে। তখন ছাত্রীরা স্যারকে জানায়, তারা রাজনীতি বুঝেন না, শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে। এখানে এসব কথা না বলাই ভালো।
এতে ওই শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলতে থাকেন।
এ সময় ওই শিক্ষক আরো বলেন, ‘আমি বুড়া মানুষ আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে মজা লাগে না। তোদের পছন্দ চেংড়া শিক্ষক। তাই চেংড়া শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাস। আমার কাছে প্রাইভেট না পড়লে তোদের কাউকে পাস নম্বর দেওয়া হবে না।
শিক্ষকের মুখ থেকে এ ধরনের অশ্লীল কথা শোনার পর ছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। পরে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে ছাত্রীরা মাঠে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। কিন্তু গত বুধবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অশ্লীল কথাবার্তার অভিযোগের বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
এ অবস্থায় গতকাল রবিবার ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসে প্রথমেই ক্লাস বর্জন শুরু করে। তারা বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়ে ইংরেজি শিক্ষক নূর মোহাম্মদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুল ইসলামকে ভবনের নিচতলায় এসে বিক্ষোভরত ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নূর মোহাম্মদের পদত্যাগ ছাড়া ছাত্রীরা কিছু শুনতে রাজী হয়নি।
এর মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের কাছে গিয়ে বাজে কথা বলে নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে দেখা গেছে। এ সময় শিক্ষক নুর মোহাম্মদের কাছে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরা আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে কি করবে, এদের নাচাইতাছে অন্যরা। আমার বিরুদ্ধে যা বলতাছে, তা মিছা কথা।
এ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক। তিনি বলেন, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক থাকার কথা বাবা-সন্তানের মতো। কিন্তু শিক্ষক যদি সন্তানসম ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন, তাহলে বলতে হবে তিনি নৈতিকতাবোধ হারিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে চলেছে। তিনি জেনেছেন গত বুধবার নূর মোহাম্মদ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশালীন কথাবার্তা বলেছেন। সেই থেকে ঘটনার সূত্রপাত। ওই শিক্ষকের প্রভাবের কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তিনি কিছুদিন আগে একদলের প্রভাব দেখাতেন। এখন অন্যদলের প্রভাব দেখাচ্ছেন।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেছে। তিনি নিজেকে খুব প্রভাবশালী বলে প্রচার করে থাকেন। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে তিনি এসব করতে পারেন না।