বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরিরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সনদ অর্জনের প্রতিষ্ঠানের বৈধতা নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন তোলা হয়। বিষয়টি বিব্রতকরও বটে। শিক্ষকদের সনদ যাচাই-বাছাই করার পর ও দীর্ঘকাল চাকরি করার পরও এ ধরনের প্রশ্ন তোলা অনেকের মনে হতাশা তৈরি করে। ৬ মাসের কম্পিউটার সনদ অর্জনকারী চাকরিরত শিক্ষকেরা অনেক আগে সরকার অনুমোদনপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন করে সনদ অর্জন করে। তৎকালীন প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করার সুযোগ ছিলো সীমিত। বর্তমানে সনদ প্রদানকারী সেসব প্রতিষ্ঠানের সরকারের অনুমোদনের বৈধতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই সে সময় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সনদ অর্জন করেন।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বা তার পূর্বে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা লাইব্রেরিয়ান বা গ্রন্থাগার সনদ নিয়েছেন তাদের অনেকেই ওই সনদ দিয়ে গ্রন্থাগার পদে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন। ওই সময়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। অতঃপর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারীরা শর্তসাপেক্ষে সরকারিভাবে বৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বছরের মধ্যে পুনরায় সনদ অর্জনের সুযোগ পেয়েছে। সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদ তৎকালীন সরকার বাতিল করে ও বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে অনেকে গ্রন্থাগারিক পদে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। সরকার তাদের চাকরি বহাল রাখে এবং ১১তম গ্রেডে এমপিওভুক্ত করেন। তবে শর্ত হিসেবে তিন (৩) বছরের মধ্যে সরকারি সনদ অর্জন করার সময়সীমা ঠিক করে দেয়। এই সুযোগ গ্রন্থাগারিকরা পেলেও অন্যান্য পদের শিক্ষকেরা পাননি। বিশেষ করে কম্পিউটার সনদধারীরা পুনরায় সরকারি সনদ অর্জন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ডিআই এর রিপোর্টে যাদের সনদ সমস্যা বিশেষভাবে বিএড, কম্পিউটার সনদধারীদের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি এবং তাদের এমপিও বন্ধ করা হয়। যা অমানবিক ও চরম বৈষম্য। লাইব্রেরিয়ানদের মতো তাদেরও তিন বছরের মধ্যে সরকারি সনদ অর্জনের সুযোগ দেয়া দরকার। এই সময়ের মধ্যে যারা সরকারি সনদ অর্জন কারতে ব্যর্থ হবে তাদের চাকরি বা এমপিও অটো বন্ধ হওয়ার দাবি রাখছি। অনেক শিক্ষক চাকরির পূর্বে জানতেন না যে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ অর্জন করতে হবে বা কোন কোন প্রতিষ্ঠান বৈধ কিংবা অবৈধ! এমনকি নিয়োগ কর্তারাও ভালোভাবে জানতেন না। কষ্টার্জিত সনদ অর্জনের পর বা চাকরি নেয়ার পর সনদের বৈধ বা অবৈধের বিষয়টি শিক্ষকেরা জানতে পারেন এবং সমস্যায় পড়েন। তাই বিএড ও কম্পিউটার সনদ সমস্যার জন্য চাকরিরত শিক্ষকদের বা যাদের চাকরি গেছে তাদের তিন বছরের সরকারি সনদ অর্জনের শর্ত দিয়ে চাকরি ও এমপিও ফেরত দেয়া এখন সময়ের দাবি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, লৌহজং বালিকা পাইলট ইচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)