শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও অডিটে গিয়ে ঘুষ চেয়ে গণপিটুনির শিকার মুহাম্মদ মনিরুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে এবার হত্যার হুমকির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারই এক সহকর্মী মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আল ক্বারনী মুন্সী। তারা উভয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক এবং বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা।
গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় জিডিটি দায়ের করা হয়। তাতে নিজের নিরাপত্তা চান ওয়ায়েছ আল ক্বারনী মুন্সী।
এদিকে কক্সবাজারের ওই ঘুষকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে ডিআইএ। উপপরিচালক মোহাম্মদ আলফাজ উদ্দিনকে আহ্ববায়ক করে কমিটিতে শিক্ষা পরিদর্শক একেএম রাশিদুল হাসান ও সহকারী পরিদর্শক সিকান্দার আলীকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে ২৫ নভেম্বর ঘটনার তদন্ত করতে ২৪ নভেম্বর চকোরিয়ায় যেতে বলা হয়েছে।
জিডিতে তিনি লেখেন, গত ২২ অক্টোবর শিক্ষা ভবনের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রশিক্ষণ চলাকালে মনিরুল আলম মাসুম অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমাকে বলতে থাকেন ‘ক্বারনী, তুমি কামরুন ও সাদিয়াকে বদলি করে দাও। জবাবে বলি, আমি বদলি করার কে’?
জিডিতে তিনি আরো উল্লেখ বলেন, ‘পরক্ষণে মাসুম বলা শুরু করে আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা অপর সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানাকে বদলি না করে তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। বিবাদী আরো বলেন, তোমরা কেউ পার পাবে না। ক্বারনী, তোমারে গুলি কইরা দিমু! তুমি জানো না আমি তোমার প্রতি কতো ক্ষ্যাপা। তোমারে আমি ছাড়মু না। তোমাদের একটারেও ছাড়মু না। প্রত্যেকটারে গুলি করমু। পিপড়ার মতো মারমু। সব কয়টারে গুলি কইরা মারমু। এভাবে কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পূর্বেও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিবাদী মনিরুল আলম মাসুমের দুর্ব্যবহার করার অসংখ্য নজির রয়েছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং জীবননাশের আশঙ্কা করছি।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর মুহাম্মদ মনিরুল আলম মাসুম কক্সবাজারে দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও অডিটে গিয়ে ঘুষ দাবি করে গণধোলাইয়ের শিকার হন। সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন তিনি ও তার সহকর্মী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা শেখ নুরুন্নাহার। কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজে ওই ঘটনাটি ঘটে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মনিরুল আলম মাসুম গত ১০ বছর ধরে ঘুষের স্বর্গখ্যাত ডিআইএতে কর্মরত। নিজেকে মিনিস্ট্রি অডিটর পরিচয় দিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহার করার অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গত দশ বছরে অসংখ্যবার দৈনিক শিক্ষাডটকম, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে মনিরুল আলমের ঘুষকাণ্ডের। কিন্তু প্রতিবারই শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের দপ্তরকে ম্যানেজ করে টিকে গেছেন।
গত ৪ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও কটূক্তি করেছেন তিনি।
ওই ঘটনার তিন মাস পর কক্সবাজারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষার নামে ঘুষ চাওয়ায় পিটুনির শিকার হন সাবেক ছাত্রলীগের এই নেতা। মনিরুলকে লাঞ্ছনা ও মারধর করতে দেখেছেন এমন কয়েকজন দৈনিক আমাদের বার্তাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ফখরুল ইসলাম তখন জানান, দশটি প্রতিষ্ঠান অডিট করতে এসে এই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে সবার কাছে ঘুষ দাবি করেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে মারধর করেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।