আজ ২৫ শে বৈশাখ (৮ মে) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। সিদ্ধান্ত ছিলো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদযাপন করা হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। কিন্তু রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপনের নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। স্কুল-কলেজগুলোও রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সোমবার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। সে নির্দেশনা পেয়ে এদিন দুপুরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ ঘটনার সমালোচনা করেছেন প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান। তিনি বলেছেন, দায়সারা নির্দেশনা না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচিত ছিলো পরিকল্পিতভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা না করে তারা দায়সারা আদেশ জারি করেছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনেই। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতীতে স্বতস্ফুর্তভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেনো মন্ত্রণালয়ের আদেশের অপেক্ষায় থাকবে হবে।
জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন নিয়ে গত ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৭ এপ্রিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ওই সভার কার্যবিবরণী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়। সিদ্ধান্ত ছিলো, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী আবশ্যিকভাবে উদযাপন করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্মবার্ষিকী উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
তবে, রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন অর্থাৎ ৮ মে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশনা দিতে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সমন্বয় শাখার উপসচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসউদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ২৫ শে বৈশাখ (৮ মে) ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী আবশ্যিকভাবে উদযাপন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্মবার্ষিকী উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
আদেশে আরো বলা হয়, আগামী ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী। ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী আবশ্যিকভাবে উদযাপন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্মবার্ষিকী উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের আদেশ পেয়ে সোমবারই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা উদযাপনের নির্দেশনা জারি করার বিষয়ে মন্তব্য জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় উপসচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসউদের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রূপক রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সোমবারই অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আদেশ জারি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি জানিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল আমাদের বাঙালি জাতির সত্বায় মিশে আছেন। কিন্তু রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর দিন তা উদাযাপনের নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রণালয় দায়সারা কাজ করেছে। তাদের উচিত ছিলো সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আগে স্কুল-কলেজগুলো নিজেরাই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে গান-কবিতায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। কিন্তু স্কুল-কলেজগুলোকে এখন তা উদযাপনে নির্দেশনার অপেক্ষা করতে হবে কেনো, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।