জাতীয় নির্বাচনের আগে নীতিমালার শর্ত শিথিল করে বিশেষ বিবেচনার স্বীকৃতি পাওয়া সব ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করতে সরকারের ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়েছেন তারা। শিক্ষকরা আশা করছেন এ সময়ের মধ্যে সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর তা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছে ননএমপিও শিক্ষকদের সংগঠন ‘নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ’ এ ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন জরা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে যৌক্তিক আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনের ফসল হিসেবে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রায় সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। যা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য কোনো আবেদন নেয়া হয়নি। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ চলে যাচ্ছে, যদিও আবেদন নেয়ার কথা ছিলো কিন্তু এখন পর্যন্ত তা নেয়া হচ্ছে না। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে যদি আবেদন না নেয়া, হয় তাহলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিনা বেতনে কেউ চাকরি করতে পারে না।
দবিরুল ইসলাম বলেন, এমপিওভুক্ত হতে না পারা ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর বা তারও বেশি সময় বেতনহীন অবস্থায় থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন ধ্বংসের দারপ্রান্তে। বিনা বেতনে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেকেই অবসর গ্রহণ করেছেন, আবার অনেকের চাকরির বয়স শেষের দিকে। আমরা মনে করি, সারা বিশ্বে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা, যা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রত্যাশা করিনি।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের গত ১৪ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে ননএমপিও শিক্ষকদের অমানবিক কষ্টের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন এবং গত ২০ সেপ্টেম্বর জানতে পারলাম আরো ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় এমপিভুক্ত হতে যাচ্ছে। দেশের সব ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সীমাহীন কষ্টের কথা চিন্তা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিবেচনায় এমপিও নীতিমালার সব শর্ত শিথিল করে সব ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন।
১৫ দিনের দাবি মধ্যে দাবি না মানলে কর্মসূচি প্রসঙ্গে আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটাই দাবি, বিশেষ বিবেচনায় এমপিও নীতিমালার সব শর্ত শিথিল করে ননএমপিও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ডিগ্রি কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।
কেমন কর্মসূচি দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাবি পূরণ না হলে অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনেও যেতে পারি। তবে আমরা আশা করি আগামী ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখ থেকে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তকরণে একটি সুখবর পাবো।
সংবাদ সম্মেলন নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ শাহজাহান সিরাজ, অধ্যক্ষ মুনিমুল হক, অধ্যক্ষ বাকী বিল্লাহসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশেষ বিবেচনায় শুধুমাত্র ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতাধিক শিক্ষকরা অংশ নেন।