দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার। এ গুণী লেখকের প্রয়াণ দিবস আজ। তিনি উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা।
তিনি বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিকের কাহিনিকার। শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। যে কারণে তাকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়। তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্গবিভূষণ সহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
সমরেশ মজুমদার ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কৃষ্ণদাস মজুমদার ও মাতা শ্যামলী দেবী। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। ভবানী মাস্টারের পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। এরপর বিদ্যালয়ের পাঠ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে । তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের।
সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি শুধু তার লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তার জুড়ি মেলা ভার। তার প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাঁর কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে।
সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি 'উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ' বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।
অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশএর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।
শেষ জীবনে সিওপিডিতে ভুগছিলেন লেখক, সঙ্গে ছিলো স্লিপ অ্যাপনিয়াও। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দর ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই ৮ মে তিনি প্রয়াত হন।