বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কোনো কার্যক্রম দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকার বাইরে পরিচালনা করতে হলে সরকার তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তেমনি বাংলাদেশে বিদেশি দূতাবাসে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলেও সরকারের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা নিয়ম না মেনে কক্সবাজারে সায়মন বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হোটেলের পার্কিং এলাকা ভাড়া নেওয়ার চুক্তি করেছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, চিঠিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ঘিরে ‘বিদেশি কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের’ ঘন ঘন পরিদর্শন এবং উন্নয়ন-সহযোগিতার অজুহাতে ‘অতি উৎসাহী কর্মতৎপরতা’ লক্ষ করা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আমি নতুন এসেছি, তাই পুরোপুরি বলতে পারছি না।’
দূতাবাসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে সায়মন বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান রুহেলকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখার ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এমন একটি চুক্তি ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সময় শেষ হয়েছে; এখন আর নবায়ন করিনি।’
চিঠিতে উল্লেখ আছে, গোপন অনুসন্ধানে জানা যায় যে, কক্সবাজার জেলার হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের পার্কিং এরিয়ায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কিছু গাড়ি প্রায়ই পার্কিং অবস্থায় দেখা যায়। মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায়ই হোটেলটিতে অবস্থান করে নিজেদের ও সহযোগী দাতা সংস্থার কর্মকাণ্ড তদারকি করেন। এ বিষয়ে হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ২০২১ সালের ১ মে মার্কিন দূতাবাসের জেনারেল সার্ভিস অফিসার ফিলিপ জে. মাটিয়াস ওই হোটেলের পার্কিং এরিয়া দুই বছরের জন্য ভাড়া নিতে সায়মন বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে ঢাকার বাইরে পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন লাগে। ঢাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ কোনো নির্দেশনা পায়নি। সায়মন বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষও কক্সবাজার জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানায়নি।
চিঠিতে উল্লেখ আছে, বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য কক্সবাজারভিত্তিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা দায়িত্ব পালন করে আসছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘসহ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ডের আড়ালে বিদেশি কূটনীতিকদের ঘন ঘন পরিদর্শন এবং উন্নয়ন-সহযোগিতার অজুহাতে অতি উৎসাহী কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন বিদেশি মিশনে নিয়োজিত ‘কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন অনেক বেড়েছে। বিদেশি সংস্থার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তারা কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এলাকায় বিভিন্ন হোটেল ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যেহেতু একটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে, তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই জানানো উচিত ছিল।