আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সার্বিক দিক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত নির্দেশনা পেতে আজ বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ উপলক্ষে গণভবনে নৈশভোজেরও আয়োজন রয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য আগামী বাজেটে মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা উঠতে পারে। তা হতে পারে ১০, ১৫ বা ২০ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নতুন বাজেটের সব দিক নিয়েই কথা বলবেন অর্থমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগ এবং এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, বাজেট প্রস্তুতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেয়ার কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বা কেউ যদি আলোচনাটি উত্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী যদি তা আমলে নেন, তাহলে কত টাকা বাড়তি লাগতে পারে, সে প্রস্তুতি অবশ্য নিয়ে রেখেছে অর্থ বিভাগ।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ৮ বছরে জিনিসপত্রের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের অবশ্যই মহার্ঘ ভাতা দেয়া উচিত এবং পেনশনধারীদেরও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের সচিবেরা তিন গুণের মতো বেতন-ভাতা পান, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ালে তা অর্থনীতির মধ্যেই ঘূর্ণমান থাকবে।
একই বাজারে সরকারি কর্মচারী বেশি টাকা নিয়ে যাবেন, বেসরকারি ভোক্তারা তাতে বৈষম্যের শিকার হবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, কোনো দেশই পারতপক্ষে বেসরকারি লোকদের দায়িত্ব নেয় না। বেসরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে।
সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না, বরং প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতনবৃদ্ধি হবে। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে।
দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব রয়েছে। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে এ সংখ্যা হবে প্রায় ২২ লাখের কাছাকাছি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ হাজার ১০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে তাঁদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দের কথা ভাবা হচ্ছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। সূত্রগুলো জানায়, মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেয়া হলে ৪ হাজার কোটি, ১৫ শতাংশ দেয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় যোগ হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, গাড়ি-বাড়ি কেনার সুযোগসহ সরকারি কর্মচারীদের নানাভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। অথচ একই দেশে বসবাস করে একই জিনিস কেনার জন্য বাজারে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরিবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন। চিন্তা করতে হবে, কীভাবে বেঁচে আছেন তাঁরা?
সেলিম রায়হান বলেন, ‘সরকারের নানা ধরনের ব্যয়ের চাপ ও অর্থনীতির সার্বিক দিক বিবেচনায় নিলে এ সময়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেয়ার আমি পক্ষপাতী নই। তবে অর্থনীতির অবস্থা আরেকটু ভালো হলে দেয়া যেতে পারে।’