দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: আগামী অর্থবছরেও সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ সাধারণ ইনক্রিমেন্টের (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) পাশাপাশি মূল বেতনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের শুরুতেই চাকরিজীবীদের জন্য বার্ষিক বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করে সরকার। আগামী অর্থবছরেও যা অব্যাহত থাকছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বেতন প্রায় দ্বিগুণ করে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করে সরকার। পে-স্কেল অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জুলাই তাদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে সাধারণ ইনক্রিমেন্ট রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি হলে তার সঙ্গে সমন্বয় করে ইনক্রিমেন্টের হার নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল পে-কমিশন। কিন্তু ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর বিভিন্ন সময় মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি হলেও ৫ শতাংশই ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো। গত অর্থবছরের আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে নতুন পে-কমিশন গঠনের দাবি ওঠে। তবে চলতি অর্থবছরের জন্য গত বছরের ১ জুন জতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে নতুন পে-কমিশন গঠন কিংবা বেতন বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। এর পরিবর্তে ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বলা হয়, যত নিচের গ্রেডই হোক, বেতন অন্তত ১ হাজার টাকা বাড়বে।
জানা গেছে, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে যা কমে ৭৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা দাঁড়ায়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয় হয় ৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এ খাতে প্রকৃত ব্যয় ছিল ৬২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিক-কর্মকর্তার মজুরি নির্ধারণ করে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। তাতে প্রতি বছর শ্রমিকদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই।
বিশেষ প্রণোদনা চালুর পর চলতি অর্থবছর থেকে সরকারি খাতের চাকরিজীবীদের মোট বেতন বেসরকারি খাতের তুলনায় বেশি হারে বাড়ছে। তবে এতে খুশি নন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা। ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে। মানববন্ধনে বলা হয়, বিদ্যমান বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়িভাড়া, রেশনিং পদ্ধতি চালু, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, যাতায়াত ও টিফিন ভাতা দেওয়াসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
একই ধরনের দাবি আদায়ে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে সময় বেতন বাড়ানো ও ভাতার অসংগতি দূর করার আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত হয়। ঐক্য পরিষদের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতা সরকারের কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। অন্যথায় আগামীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।