আটকে আছে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া। গত তিন মাসে স্থগিত করা হয়েছে সরকারি চাকরির অর্ধশতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা। এতে অনেকে সরকারি চাকরির বয়স হারাচ্ছেন। আবার পাঁচ লক্ষাধিক পদ শূন্য থাকলেও প্রকাশ করা হয়নি বড় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। কোভিড-১৯ বিধি-নিষেধের কারণেও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। এতে সরকারি অফিসগুলোতে রেকর্ড পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৩৩টি শূন্য পদ আছে।
সরকারি চাকরির নিয়োগে স্থবিরতা প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে অনেক পদ খালি আছে। শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্যান্য দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার দেশের একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই পিএসসি পুনর্গঠন করা হবে। এর পর বিসিএস পরীক্ষাসহ পিএসসির সব নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি অফিসে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও আগের চার বছরে শূন্য পদ কমেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ বিধি-নিষেধের কারণে সরকারি চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় সব নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়নি।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, নতুন সরকার আসার পর থেকে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সেভাবে চলা শুরু করেনি। তবে সরকারের একটি নির্দেশনা এলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সহজে শুরু করা যাবে। এতে নিয়োগজট কমবে।
পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত আছে। এ ছাড়া পিএসসি নিজে থেকে পরীক্ষাগুলো শুরুর আগে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর ৬৫৬টি পদে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর তিন মাস পরও কোনো পরীক্ষা হয়নি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শন ( সেফটি) ৪১টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। এর পর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। এর পরও নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর ৫১৬টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর। সেই পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি। গত ৫ জুলাই রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পিএসসির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ ছাড়া গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার শূন্য পদে নিয়োগের চাহিদাপত্র দেওয়ার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব করছে পিএসসি।
স্থগিত আছে অর্ধশতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা। পেট্রোবাংলার লিখিত পরীক্ষা গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্থগিত করা হয়। পেট্রোবাংলা এবং এর অধীন কম্পানিতে কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি ৯ ক্যাটাগরির পদে ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সাধারণ বিমা করপোরেশন গত ২ সেপ্টেম্বর সহকারী ম্যানেজার পদে নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
একইভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং কম্পিউটার অপারেটর পদে অনুষ্ঠিতব্য ১৯ জুলাইয়ের লিখিত পরীক্ষা, শ্রম অধিদপ্তরের ১৮ জুলাইয়ের বিভিন্ন পদের মৌখিক পরীক্ষা, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ফিন্যানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মচারী নিয়োগ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জুনিয়র অফিসার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ১৩ ক্যাটাগরি পদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা এবং লিখিত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।