দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে ভুগছে। শিক্ষকসংকটসহ নানামুখী সমস্যার কারণে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদ পাননি, এমন প্রার্থীদের (নন ক্যাডার) মধ্যে থেকে সরকারি মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ে এক হাজার ৮১৭ জন শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। সোমবার (১৭ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন এই প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে) মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয়। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি। সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটির বেশি। মোট শিক্ষক আছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ জন।
তবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট বেশি। ২০১৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী মাধ্যমিকে গড়ে প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক। এর মধ্যে আবার সরকারি মাধ্যমিকে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছেন একজন শিক্ষক।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট কেমন সেই চিত্র কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১৮ শিক্ষকের পদ রয়েছে। যদিও পদ থাকার কথা ছিল ২৬ টি পদ। কিন্তু কর্মরত শিক্ষক আছেন মাত্র ১২ জন। ১৮ পদের কথা ধরলেও ৬টি পদ খালি। নেই নিয়মিত প্রধান শিক্ষকও। সাময়িকভাবে শিক্ষকসংকট মেটাতে তিনজন শিক্ষক রাখা হয়েছে। এই শিক্ষকদের বেতন দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৬২৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছে মো. নূরুল ইসলাম। গত ২৪ জুন তিনি বললেন, সমস্যার কারণে শিক্ষা বিভাগকে জানিয়ে ও অভিভাবকদের সম্মতিতে তিনজন খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখা হয়েছে। আরও নেয়া হয়েছে তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি নেয়া হয়েছে। খণ্ডকালীন শিক্ষক ও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মাসে তিন হাজার করে টাকা দেয়া হয়। তিনি বললেন, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছেন।
একই ধরনের সমস্যা আছে আরও অনেক বিদ্যালয়ে। মাউশির সূত্রমতে, বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের ১ হাজার ৮১৭টি পদ শূন্য। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত শিক্ষকেরা অবসরে যান। তাই এই সংখ্যাও বাড়ে। এ ছাড়া সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক-পরিদর্শিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে প্রায় ৫০০, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে ১১৬ এবং উপপরিচালক পদে ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। উপপরিচালকের পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। এ ছাড়া সহকারী পরিচালক এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক-পরিদর্শিকার কিছু পদও শূন্য।
এ অবস্থায় শিক্ষক সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে মাউশি। মাউশির দুজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। এ জন্য বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদ পাননি এমন প্রার্থীদের মধ্যে থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাহিদার ভিত্তিতে এখন পিএসসি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এর উদ্দেশ্যে হলো যাতে করে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়।