সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা চাই - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা চাই

মো. ওমর ফারুক |

সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের একটি প্রাণের দাবি ছিলো একটি সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আমরা আশ্চর্য হই এই দেখে, চাকরির শেষ সময়ে এসে একজন শিক্ষক, তাও আবার নারী শিক্ষক। নারী দিবসেই, গত ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ, তার পরিবার থেকে শত শত মাইল দূরে বিভাগ পরিবর্তন করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অথবা দ্বীপ এলাকায় বদলি করা হয়!

আবার, কারো বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত। তিনি একজন গণিত শিক্ষক হয়েও বীর পিতার সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ের বিদ্যালয় কর্মরত থেকেছেন। তাকেও ২০০ কিলোমিটার দূরের জেলাতে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সরকারি কর্মকর্তা হলে বদলির যে সাধারণ নীতিমালা রয়েছে তা না মেনে স্ত্রীকে ১০০-১৫০ কিলোমিটার দূরে বা কোনো ক্ষেত্রে অত্যন্ত রিমোট এরিয়ার জেলাতে ও এমনকি দ্বীপ এলাকায় বদলি করা হয়েছে। যা একেবারেই অমানবিক।

একইভাবে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগপ্রাপ্ত সহকর্মীদের অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো নিয়োগের এক-দুমাসের ব্যবধানে দূরবর্তী স্থানে বদলি করা হয়েছে। ফলে যে দুর্ভোগের শিকার তারা হয়েছেন, পরবর্তী ব্যাচের নিয়োগ ও পদায়নের পূর্বে তাদেরকেও তাদের নিজ জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলায় আবেদনের প্রেক্ষিতে বদলির বিষয়টি মানবিক কারণে বিবেচনা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। যেকোনো নতুন ব্যাচকে যেকোনো স্থানে পদায়ন দিলে তাদের জন্য সেটি সহনীয় হবে হয়তো। কিন্তু তুলনামূলক অগ্রজদের দূরবর্তী স্থানে ফেলে রেখে নতুনদের নিজ জেলায় পোস্টিং কতোটা প্রহসনমূলক তাও বিবেচনায় নেয়া উচিত।

আমার প্রশ্ন, সেই সময়ের মাত্র ক’দিন আগে সমিতির তৎকালীন নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, সেখানে তারা গতানুগতিক ২০-২৫টি দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু শিক্ষকদের জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ, যা সমিতির নেতাদের জানা ছিলো, সমন্বয় বদলির বিষয়টি নিয়ে কেনো কথা বলেননি? এ ছাড়া, ২০১০-এ পদোন্নতি বঞ্চিত বড় অংশ এবং ২০১১ ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকদের পদোন্নতির দাবিটিই বা কেনো গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করলেন না?

বাসমাশিস সমিতির নেতারা কি তাহলে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন? অধিকাংশ শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষা ও বঞ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই? আগামীতে সাধারণ শিক্ষকদের কাছে জবাবদিহি করার জন্য নেতারা প্রস্তুত আছেন তো?

সাধারণ শিক্ষকদের সমন্বয় বদলিজনিত যে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত সমাধান করতে ব্যর্থ হলে এবং ২০১০ ও ’১১ ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য অথচ পদোন্নতিবঞ্চিত প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষকের দ্রুত পদোন্নতি নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে আপনারা জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত হোন। প্রতিটি হয়রানির ও বঞ্চনার ঘটনার জন্য দায়-দায়িত্ব স্বীকার করতে আপনাদের বাধ্য করা হবে। একইসঙ্গে শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানাই।

অবিলম্বে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য একটি সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। স্বাধীনতার এ মাসেই সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতিবঞ্চিত ২০১০ ও ২০১১ ব্যাচের শিক্ষকদের পদোন্নতি দিন। এই মুহূর্তে এই দু’টি কাজ করলে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা আপনাদেরকে কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করবে।

আশার কথা, গত ৪ মার্চ খসড়া বদলি নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে শিক্ষা সচিবসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়, কলেজ ও মাধ্যমিকের পরিচালকদ্বয় এবং মাউশির উপ-পরিচালক ও ঢাকার উপ-পরিচালক মহোদয় সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কালবিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে সরকারি মাধ্যমিক তথা মাউশির বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুস্থ ও সুস্বামঞ্জস্যপূর্ণ বদলে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে—এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, খুলনা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042259693145752