সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ফেসবুকে পোস্ট দিলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ধরনের শিক্ষকদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় এ নির্দেশনা দিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সোমবার বিকেলে একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোজার শুরু থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হলেও এবার ১৫ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকরা অনেকেই ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এ বিষয়ে গত ৩০ মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভার আয়োজন করেছিলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় রাষ্ট্রার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ফেসবুকে পোস্ট দিলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভার কার্যবিবরণী দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে আছে।
সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল হক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাঠ পর্যায়ের যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা ফেসবুক পেজে সরকার বা রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করে বা জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো রকম তথ্য উপাত্ত যা জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয়ে লেখা, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি আপলোড বা শেয়ার করে এবং ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার এবং অন্য কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য সম্বলিত কোনো পোস্ট ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করে থাকেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় আরো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, ডিপিইওরা সারপ্রাইজ ভিজিটে উপজেলায় যাবেন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারদেরদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা ক্লাস্টার পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা বিদ্যালয়ের সামগ্রীক অবস্থা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। জরুরি প্রয়োজন না হলে অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না। যার যার কর্মস্থলকে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করে, যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সার্বিকভাবে পালন করতে হবে। সবাইকে একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রমজানের ১৫ দিন বা ৯ কর্মদিবস অর্থাৎ ৬ এপ্রিল পর্যন্ত লার্নিং লস রিকোভারির জন্য খোলা রাখা হয়েছে। এই খোলা রাখার ফলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে কিছুটা বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরূপ মনোভাবের প্রকাশ ঘটছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশের মাধ্যমে। তাদের এ মতামত বহিঃপ্রকাশ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে সময় সময় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা বা পরিপত্র জারি করা হয়েছে। তারপর ও দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় যারা কর্মরত আছেন তারা বুঝে হোক আর না বুঝে হোক, জ্ঞানতো হোক বা উদ্দেশপূর্ণভাবে হোক বা উদ্দেশবিহীনভাবে হোক বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের মন্তব্য দিচ্ছেন। বিষয়টি সরকারে বিভিন্ন মহলে তীব্র অসন্তোষ এর জন্ম দিয়েছে। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো ও মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার জন্য এ সভা আয়োজন করা হয়েছে। সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে সব সুপারেন্টেডেন্ট, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইন্সট্রাক্টর, সহকারী ইন্সট্রাক্টর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের অসন্তোষ বিষয়টি যাতে পৌছানো হয় তা নিশ্চিত করা এবং সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য সবাইকে অধিকরত সচেতন করা। প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত আছেন তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লাস্টার পর্যায়ে সব শিক্ষককে বিষয়টি অবহিত করতে হবে এবং ৬ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গত ২-৩ মাসে প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মান ইজ্জত সম্মান বৃদ্ধি পায় এমন সব কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব কাজের প্রতিফলন ঘটে সেসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে হয়েছে। সবার সামগ্রিক চেষ্টার ফলেই আজকে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা আর্ন্তজাতিক সুনাম অর্জনের দিকে ধাবিত। অল্প কিছু সংখ্যক লোকের খামখেয়ালিপনা, কিছু বুদ্ধিহীনতা, কিছু অবিবেচক কাজের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের কাজের গতিশীলতা বাধাগ্রস্থ হয়।
সভায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, আমাদের অনেক সমস্যা আছে। চাকরিগত কারণে, সুযোগ সুবিধাজনিত কারণে বা ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে আমাদের অনেক অসুবিধা আছে। তা সত্ত্বেও সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, নিষ্ঠার সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কাজ করতে হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।